প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরে দেশে মামলার জট কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলার জট কমেছে। ঢাকাতে মামলা নিস্পত্তির হার ২৪৫ ভাগ। আর গাজীপুরে ১৬৩ ভাগ। দেশের ২৯টি জেলায় মামলা ফাইলিংয়ের চেয়ে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। এছাড়া বিচারকদের আন্তরিকতায় উচ্চতর আদালতেও মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে বিচার প্রার্থীদের জন্য সাতক্ষীরা আদালতে স্থাপিত ন্যায় কুঞ্জ উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ কাজ করে। ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের মানুষের অধিকার সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। জনগণই রাষ্ট্রের মূলশক্তি। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা অবিচল। কোনোক্রমেই যেন মানুষের সেই আস্থার জায়গাটিতে আঘাত না লাগে। এজন্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আইনজীবী ও বিচারকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, একজন বিচারক যখন তার আসনে বসেন তখন তার থেকে একজন আইনজীবীর দূরত্ব থাকে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাত। এত কাছাকাছি থেকে মামলার বিচার কাজ পরিচালনা করেন তারা। তাদের উভয়েই ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন। তাই কেউ যেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সব সময় সজাগ থাকতে হবে।
পরে তিনি সাতক্ষীরা বার মিলনায়তনে আইনজীবীদের দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে তার সম্মানে দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। প্রসঙ্গত, তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে পড়ালেখা করতেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষক মিলনাতয়নে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে জীবনের সবচেয়ে ভালো দিনগুলো কোথায় কাটিয়েছি, জবাবে বলবো, সাতক্ষীরায় কাটানো দিনগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
প্রধান বিচারপতি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। সেসময়ে ক্লাসের ফাঁকে কলেজের লেকে যেয়ে বসে থাকা, বরই খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা এগুলো সবই ছিলো আমার জীবনের রঙিন ইতিহাস। সাতক্ষীরা আমার জন্মস্থান না হলেও জীবনের রঙিন সময়গুলো এখানে পার করেছি। আমি প্রধান বিচারপতি একদিনে হইনি। এর পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষকদের। তাই এই প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অমলিন হয়ে থাকবে চিরকাল।
সংবর্ধনায় যোগ দেয়ার আগে তিনি তার শিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর আব্দুল ওদুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসায় যান। পরবর্তীতে তাকে সঙ্গে নিয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে আসেন প্রধান বিচারপতি। পরে তিনি কলেজ মাঠে একটি নারকেল গাছের চারা রোপন করেন।
এসময় প্রধান বিচারপতির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিচারপতির কাছের বন্ধু ও শিক্ষকরা।