মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম : চার বছরের প্রকল্প সাত বছরেও শেষ হয়নি - দৈনিকশিক্ষা

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম : চার বছরের প্রকল্প সাত বছরেও শেষ হয়নি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চার বছরে একটি প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৩৪০টি হাই স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করার কথা ছিল। এর মধ্যে সাত বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু একটি স্কুলেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা হয়নি। এখন ক্লাশরুম স্থাপনের জন্য স্কুলগুলিতে টাকা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। 

এ নিয়ে দুর্নীতির ব্যাপকতা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কারণ ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির কারণে অন্তত তিনবার এই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) বদল করা হয়েছে। নিচের স্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও বদলি করা হয়েছে। কারণ বেশির ভাগ কর্মকর্তারই নজর ছিল পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে কেনাকাটার। এসব কারণে প্রায় সাত বছরে মাঠে গড়ায়নি প্রকল্পটি।

আলোচিত প্রকল্পটি হলো- ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্প-২’। এটি বাস্তবায়নে সরকারের মোট এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যায় ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৩৪০টি হাই স্কুলে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মহানগর ও জেলা সদরের স্কুলে প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ স্থাপনের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গড়ে একটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, সাউন্ডবক্স ও মডেম-ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য বারবার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠে পিডি ও মাউশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ কারণে প্রকল্পটি ভেস্তে যাচ্ছে।

এই প্রকল্পের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের (বর্তমানে অন্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত) সভাপতিত্বে গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভায় জানানো হয়, ‘গত বছরের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ মঞ্জুরি সহায়তা আকারে প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের সংস্থান রেখে আরডিপিপি (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা) প্রণয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে সায় দেয়নি পরিকল্পনা কমিশন। গত ১৫ জুন পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় মূল ডিপিপিতে ‘বর্ণিত কেন্দ্রীয়ভাবে ক্রয় করে তা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিতরণের পদ্ধতি অনুসরণ করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’

পরিকল্পনা কমিশনের এই নির্দেশনার বিরোধিতা করে শিক্ষা সচিবের সভায় বলা হয়, ‘মূল ডিপিপিতে বর্ণিত ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করলে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের সঙ্গে ভ্যাট, আইটি ও টেন্ডারিং ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং প্রকিউরমেন্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে এ সব সামগ্রী ক্রয় করা হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হতে বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়বে।’

এক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য নির্ধারিত আইসিটি সামগ্রীর ‘স্পেসিফিকেশন’ সুনির্দিষ্ট করে দিয়ে কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায় থেকে কার্যকর মনিটরিং করা হলে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক গুণগত মানসম্মত আইসিটি সামগ্রী নিশ্চিত হতে পারে বলে সচিবকে জানানো হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় সরবরাহকারী হতে বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়াটাও সহজ হবে ওই সভার কার্যবিবরণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপনের সর্বশেষ অবস্থা সর্ম্পকে জানতে চাইলে ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্প-২’ এর পরিচালক (পিডি) অধ্যাপক মোরশীদুল হাসান বলেন, তাদের (মাউশি) প্রকল্প তারা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে বাস্তবায়ন করবেন। তার দাবি, গণমাধ্যমে ‘ভুল তথ্য’ প্রচার হওয়ার কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও ‘জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির’ (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির বলেন, যাদের দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে প্রকল্প ব্যর্থ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা না করে এখন যদি স্কুলগুলোতে টাকা দেয়া হয় আইসিটি উপকরণ কিনতে সেক্ষেত্রে দুর্নীতি স্কুল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে। অনেক স্কুল উপকরণ না কিনেই কেনার দাবি করবে; কেউ পুরোন পণ্য দেখিয়ে টাকা আতœসাৎ করবে।

শেখ ইকরামুল কবির বলেন, আইসিটি উপকরণ কিনতে যদি স্কুলেই টাকা বিতরণ করতে হয় তাহলে প্রকল্প কর্মকর্তাদের বেতনভাতা দিয়ে সরকারের কী লাভ? জেলা প্রশাসকদের দিয়েই এই টাকা বিতরণ করা যায়।

প্রথমে আইসিটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুন নাগাদ। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই বর্ধিত সময়েও পুরো বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কিত কর্মকর্তারা। এই অবস্থায় গত ২৮ নভেম্বরের সভায় ‘প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখার লক্ষ্যে পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী বিদ্যমান অত্যাবশ্যকীয় জনবলের বেতন-ভাতা, আউট সোর্সিং ব্যয় এবং মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য অনুমোদিত ব্যয়ের অতিরিক্ত ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের বিষয়ে সম্মতি প্রদানের জন্য পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানানো যেতে পারে’ বলে সিন্ধান্ত হয়।

মাউশি থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের মূল কার্যক্রমসমূহ হচ্ছে পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া, যা ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু যেসব শিক্ষা উপকরণের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে সেসব উপকরণ বর্তমানে অনেকটাই ‘সেকেলে’ বা পুরোনো হয়ে গেছে।

এজন্য বিশ্ব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ কেনার নির্দেশনা রয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর। এর ফলে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করতে হলে শিক্ষকদের পূনরায় প্রশিক্ষণ দেয়া লাগতে পারে। এ কারণে শিক্ষা উপকরণ কেনার যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়েই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

এছাড়া এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৪৬ হাজার ৩৪০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ স্থাপন, দুই হাজার ১২০টি স্মার্ট শ্রেণীকক্ষ সৃজন, ৬৬৮টি মাল্টিমিডিয়া ট্রেনিংরুম ও কনফারেন্স রুম সৃজন করা এবং ৩৩টি ওয়ার্কশপ বা সেমিনার রুম স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036311149597168