মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগ দায়ের হওয়ার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। সোমবার সকালে ওই তিন আসামিকে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের পাথরঘাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মো. আরিফ হোসেন।
গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেন, পাথরঘাটা উপজেলার চরদোয়ানি ইউনিয়নের ছহেরাবাদ গ্রামের ফজলুল হক খান ওরফে ফজলু খলিফা (৬৯), একই গ্রামের ইউসুফ আলী খান ওরফে ইউসুফ মুন্সী (৭৪) ও ছোট টেংরা গ্রামের আ. রাজ্জাক (৬৮)।
জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান, কর্ণধার মিস্ত্রি ও মনোহর মিস্ত্রিকে হত্যার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলার বাদি মো. মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাথরঘাটার মতিয়ার রহমান, কর্ণধার মিস্ত্রি ও মনোহর মিস্ত্রিকে হত্যার অপরাধে মান্নান হাওলাদারকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সুলতান আহমেদ, ফজলুল হক খান, ইউসুফ মুন্সী, আ. রাজ্জাক ও হযরত আলী। মামলার পরপরই প্রধান অভিযুক্ত আ. মান্নান হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। প্রায় চার বছর পর অন্য তিন আসামি গ্রেফতার হলেন।
পাথরঘাটা থানার ওসি মো. শাহ আলম হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, র্যাব তিনজনকে থানায় নিয়ে এসেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাজির করা হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ খালেক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই মামলায় গ্রেফতার আবদুর রাজ্জাকের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় রয়েছে। মামলাটিতে এর আগে আবদুর রাজ্জাকের ছোট ভাই আবদুল মান্নান গ্রেফতার হন। তিনি পাথরঘাটা উপজেলার সাবেক কমান্ডার। তবে আবদুল মান্নানের নাম এখন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো। আব্দুল মান্নান হাওলাদার, ভাই আবদুর রাজ্জাক, বোন জামাতা হযরত আলীসহ চার থেকে পাঁচজন পাকসেনা এবং পাঁচ থেকে সাতজন অজ্ঞাত সাদা পোশাকধারীকে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছিলো।
কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান আবু পাথরঘাটা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করলে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ জুন মামলার ৪ নম্বর সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা চিত্তরঞ্জন অধিকারীকে রাজাকার জালালের বাড়ির সামনের ওয়াপদার ওপরে হত্যার উদ্দেশে গলায় ছুড়ি চালিয়েও ব্যর্থ হন। চিত্তরঞ্জন অধিকারীকে হত্যা করতে না পেরে পরদিন ৩০ জুন আপন (কাকা) চাচা সুরেন্দ্র নাথ অধিকারীকে নির্মমভাবে হত্যা করে সুরেন্দ্র নাথ অধিকারীর লাশ গুম করা হয়। ১৮ আগস্ট বাদির বাবা মতিয়ার রহমান ও ১ নম্বর সাক্ষী মনমথ রঞ্জন মিস্ত্রীর বাবা মনোহর মিস্ত্রী, (কাকা) চাচা কর্নধর মিস্ত্রীকে দিনের বেলা গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে মনোহরের বাড়ি অগ্নিসংযোগ করা হয়।