সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। বলছেন, দেশের মানুষকে জিম্মি করে তারা এই রায় নিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরাও আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
বুধবার (১০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রজন্ম ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
তারা বলেন, দেশের মানুষকে জিম্মি করে এই রায় নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এখন আমরাও বসে থাকবো না। এতোদিন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে দেখে কঠোর আন্দোলন করিনি। কিন্তু এবার বৈঠক করে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
এসময় কোটা শীঘ্রই ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলো বলছে, কোটা আবার ফিরিয়ে আনতে শীঘ্রই সংসদ ভবন অভিমুখী মিছিল বের করা হবে। প্রয়োজনের সংসদে আমাদের বিষয়টি উত্থাপন করে শীঘ্রই কোটা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
আন্দোলনকারীদের বিএনপি-জামায়াতের দোসর আখ্যা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, ‘আজকে আপনারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেছেন। এখানে শরীক হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা। আপনারা ঘরে ফিরে যান। ৭১ খ্রিষ্টাব্দে যে স্বাধীনতা হয়েছে আপনার তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আমরা এই যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরাও আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরাও রাস্তায় থাকবো।’
আপিল বিভাগের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় তারা আরো বলেন, আমরা কোটা পুর্নবহাল চাই। কোটা আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান। এটি চলবে। দাবি আদায় করেই আমরা ঘরে ফিরবো।
এদিকে, আপিল বিভাগের রায়ের পর শাহবাগে অবস্থান নেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তারা জানান, আদালতের প্রতি সম্মান আছে। তবে কমিশন গঠন করে কোটা পদ্ধতির সংস্কার ও স্থায়ী সমাধান হওয়ার আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
তারা আরো বলেন, আমরা ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে এসে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় নয়, সকল চাকরি থেকে কোটা তুলে নেয়ার এক দফা দাবি আমাদের। আমাদের দাবি হাইকোর্টের কাছে নয়, সংসদের কাছে। সংসদে আইন পাশ করে সকল চাকরি থেকে কোটা তুলে নিতে হবে। আইন অনুসারে ৫ শতাংশ কোটা রেখে সব তুলে নিতে হবে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। স্থায়ী সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না, আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, আদালতের রায়ের পর আন্দোলন করার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে রিট করেন। গত ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা ব্যবস্থা।
এরপর গত ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় শনিবার রাজধানীর শাহবাগ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সে অনুযায়ী রোববার ও সোমবার টানা দুদিন বিকেলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ এলাকা থেকে এ কর্মসূচি পালন করেন।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের' ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, সারাদেশের সব মহাসড়ক ও রেলপথ এ ব্লকেডের আওতাভুক্ত থাকবে।
এর আগে ব্লকেড কর্মসূচিতে কয়েকঘণ্টা সড়ক অবরোধ করলেও বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। এদিনই আবার কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি হয়। শুনানির পর সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেন আপিল বিভাগ। চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে।