কুড়িগ্রাম-৩ উলিপুর আসনের সংসদ সদস্য এম এ মতিনের নাম জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে উলিপুর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। এমপি মতিনের পরিবারকে ‘রাজাকার পরিবার’ দাবি করে তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন : অমুক্তিযোদ্ধারা বিএনপির এজেন্ডায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন : এমপি এম এ মতিন
তবে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ হাসিলে তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংসদ সদস্য এম এ মতিন। তিনি বলছেন, আট বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলে দাবি করা একজন ব্যক্তি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আগামী রোববার উলিপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সব সত্য তুলে ধরা হবে।
শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে কুড়িগ্রাম চিলমারী সড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ। পরে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উলিপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার, উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম হোসেন মন্টু। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদসহ অনেকে। এসময় উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান হাবীব রানাসহ প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, সংসদ সদস্য এম এ মতিন ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন, তার পরিবার রাজাকার পরিবার, তার ভাই আব্দুল করিম ছিলেন উলিপুর উপজেলা রাজাকার কমান্ডার। তারা মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনকারী। তিনি কোনোদিন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। লাল মুক্তিবার্তা, ভারতীয় তালিকা এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গেজেটে তার নাম নেই। তিনি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনলাইনে আবেদনও করেননি এবং সেই তালিকায় তার নাম নেই। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করেছেন। এছাড়াও দেলোয়ার হোসেন নামে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক একজনকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমরা এই দুই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিলের আহ্বান করছি। না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হবো।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য এম এ মতিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ হাসিলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যে মন্টু আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে সে নিজেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। সে উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কথিত সভাপতি হলেও বাস্তবায়ন করছে বিএনপির এজেন্ডা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মন্টুর বয়স ছিলো আট বছর, সে এখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করছে। তার সঙ্গে কুড়িগ্রামের সংবাদ সম্মেলনে তিনজন বিএনপি নেতা ছিলেন বলে জানতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, আমি ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে আবেদন করেছি। যাচাই-বাছাই ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিছু দিন আগে যখন আমি এ অনুমোদন পেয়েছি, আমাকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সংবর্ধিত করেছেন। কিংবদন্তি বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর মন্টু নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে অমুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।