দৈনিকশিক্ষাডটকম, কুমিল্লা: কুমিল্লায় একটি অভিজাত হোটেলে কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে একটি ‘মিলনমেলার’ আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট হানা দেয়ার পর পালিয়েছেন সবাই। গতকাল কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার এলিট প্যালেস হোটেলে দেবিদ্বার উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ‘বর্ষসমাপনী মিলনমেলা’ নামে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ওই আয়োজনে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের অংশ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আর আসেননি।
অনুষ্ঠানটি করা হচ্ছিলো অনেকটা গোপনেই। খবর পেয়ে সাংবাদিক ও ম্যাজিস্ট্রেট তার দল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলে হন্তদন্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন শিক্ষকরা।
সেখানে অভিযানে যাওয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতীশ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষে ঘটনাস্থলে আসার পর আয়োজকরা জানিয়েছেন এটি শিক্ষক সমিতির অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে আমরা আয়োজকদের কাছে এখানে আসা শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়- তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলটির চারতলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক জড়ো হয়েছেন। সেখানে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিলো, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি (নৌকার প্রার্থী) কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হবেন।
ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে ওই হোটেলের হল রুম থেকে বাইরে ছুটে আসেন দেবিদ্বার আলহাজ্ব জোবায়দা খাতুন মহিলা কলেজের প্রভাষক নূর মোহাম্মদ বাবু। সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা উত্তর জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক বাবু আয়োজকদেরও একজন। তিনি বাইরে এসে প্রথমে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তার পরিচয় নিশ্চিত হতে চাইলে তিনি তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি নিজেকে শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। নূর মোহাম্মদ বাবু বলেন, এখানে আমরা কলেজ শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। এটা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান না।
এখানকার শিক্ষকদের অনেকেই জাতীয় নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন- এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, শিক্ষকদের অনেকেই নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন- এটাই তো স্বাভাবিক বিষয়। এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজনৈতিক বিষয় না হলে উপজেলার সব কলেজের শিক্ষককে না এনে শুধু প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের আনা হল কেন- এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ‘তাড়া আছে’ বলে চলে যান প্রভাষক বাবু।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এখানে শুধু সংসদ সদস্যের অনুসারী শিক্ষকদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
পরে আয়োজকরা দুঃখ প্রকাশ করে জানান, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল উপস্থিত হতে পারছেন না।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, আমার এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান ছিলো না। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, ওই সময়ে আমি কুমিল্লার বাইরে ঢাকায় ছিলাম। প্রতিপক্ষের লোকজন আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মো. আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ইউসুফ, তৃণমূল বিএনপির মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন থেকে আজহারুল করিম মুন্সী, বিএসপির মো.শফিউল বাদশা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইকরাম হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের শিমুল হোসেন, ইসলামী ঐক্যজোটের রফিকুল্লাহ সাদী।