৬ বছর পর আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নগর ছেয়ে গেছে তোরণ, ব্যানার আর ফেস্টুনে। সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন, এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
ময়মনসিংহ নগরের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। ইতোমধ্যে গুরুত্বপুর্ণ ২টি ইউনিটের সম্মেলনকে ঘিরে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবু সাঈদ দীন ইসলাম ফখরুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সার্কিট হাউজ মাঠের উত্তর পাশে নৌকার আদলে মঞ্চ নির্মাণ হচ্ছে। শুক্রবার মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হবে। মঞ্চে ২০০ জনের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি।
জানা গেছে, সবশেষ ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। পরে একই বছরের ১০ অক্টোবর অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকাকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অপরদিকে মহানগর কমিটিতে এহতেশামুল আলম সভাপতি এবং মোহিত উর রহমান শান্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়।
দলীয় সূত্র জানান, এবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুইটি ইউনিট থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কমপক্ষে পাঁচজন করে প্রার্থী হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, বর্তমান সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও ফারুক আহমেদ খান আলোচনায় রয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা হলেন, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, বর্তমান জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কুদ্দুস ও শওকত জাহান মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ আলী আকন্দসহ অনেকে।
অপরদিকে, মহানগরের সভাপতি পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগরের সহ-সভাপতি ইকরামুল হক টিটু। এছাড়াও বর্তমান সভাপতি এহতেশামুল আলম ও সাদেক খান মিল্কী টজু সভাপতি পদপ্রত্যাশী। আর সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিল্লু, যুগ্ম সম্পাদক হোসাইন জাহাঙ্গীর বাবু ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হক রিপন প্রার্থী হয়েছেন।
মেয়র ইকরামুল হক টিটু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘সম্মেলন সফল করতে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। নতুন কমিটি কী প্রক্রিয়ায় হবে সেটি নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় কমিটি। যোগ্যরাই নেতৃত্বস্থানে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
শনিবারের এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক ও প্রধান বক্তা হিসেবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১০টিতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করা হয়। বাকি ফুলপুর, ময়মনসিংহ সদর ও ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এখনো হয়নি।
অনেকে বলেছেন, সম্মেলনকে ঘিরে তোরণ, ফেস্টুন, পোস্টার আর প্যানাফ্লেক্স লাগানোর প্রতিযোগিতা চলছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এ প্রতিযোগিতা।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নতুন কমিটি কি প্রক্রিয়ায় হবে সেটি নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় কমিটি। আমাদের আশা, সম্মেলনের মাধ্যমে একটি ভালো ২টি কমিটি হবে। যে কমিটির মাধ্যমে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ আরও গতিশীল হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে তোরণ ও ফেস্টুন টানানোর বিষয়টি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। একপর্যায়ে তিনি কিছুটা রসিকতা করে বলেন, সবাই যেভাবে তোরণ আর ফেস্টুন টানিয়েছে, তাতে আমার নিজের জন্য কোনো জায়গা নেই।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সম্মেলন ঘিরে জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে দুটি কমিটিতে কারা নেতৃত্বে আসছেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে ২৮ নভেম্বর রাতের আধারে পলিটেনিক্যাল মোড় থেকে দীঘারকান্দা বাইপাস মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে টানানো মেয়র ইকরামুল হক টিটুর ছবি সংম্বলিত কিছু ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার আর প্যানাফ্লেক্স ছিড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।