যেসব লেনদেন আয়করের আওতায় পড়বে - দৈনিকশিক্ষা

যেসব লেনদেন আয়করের আওতায় পড়বে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দেশে প্রতিবছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়করের রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এজন্য ব্যাংকের হিসাব বিবরণী বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে কোন লেনদেন আয়করের আওতায় পড়বে তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। 

কর্তৃপক্ষের কাছে বার্ষিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ জমা দেয়াকে আয়কর রিটার্ন বলে। এতে আয়, ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়। একজন মানুষের বছরে আয় কত সেটার ভিত্তিতে তার ওপর কর আরোপ হয়। যারা আয়কর রিটার্ন জমা দেন, তাদের অনেকের স্যালারি অ্যাকাউন্ট বা চলতি হিসাব রয়েছে।

আইন অনুযায়ী, ব্যক্তি যখন আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন, তাতে সবধরনের অ্যাকাউন্টের তথ্য জমা দিতে হয়। কারও একাধিক ব্যাংক হিসাব থাকলেও আয়কর নথিতে সব অ্যাকাউন্টের তথ্য না দিয়ে শুধু একটি অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দিয়ে রিটার্ন জমা দেন। সেক্ষেত্রে যে আয় দেখানো হয়েছে, সেটার চেয়ে ব্যাংক লেনদেন বেশি। এতে বিপত্তিতে পড়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ, আয়কর নথি বিভিন্ন সময় পর্যালোচনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা।

যদি দেখা যায়, কেউ ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দেননি, সেটি অপ্রদর্শিত আয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তখন জরিমানা করার বিধান রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ জানান, আয়কর রিটার্নে যা দেখানো হয়, সেটার চেয়ে বেশি বা অপ্রদর্শিত আয় পাওয়া গেলে জরিমানাসহ কর দিতে হয়।

এক্ষেত্রে আগে যে আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে, তা যদি নতুন করে ধার্য করা করের ৭৫% এর কম হয়, তাহলে ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তবে আগে পরিশোধ করা কর নতুন নির্ধারিত করের ৭৫ শতাংশের বেশি হলে জরিমানা হবে না।

ব্যাংকে যে লেনদেন হবে তা অবশ্যই আয়কর নথিতে প্রদর্শিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অন্য কোনও লেনদেন হলে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত মোট সুদ বা মুনাফা অন্যান্য উৎসের আয় হিসেবে দেখাতে হবে। উৎসে কর প্রদেয় করের সঙ্গে সমন্বয় হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবের কোনও তথ্য গোপন রাখা যাবে না। সম্প্রতি কর ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্যে সরাসরি প্রবেশাধিকার চেয়েছে। ফলে রাজস্ব বোর্ড করদাতা ও ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য খুব সহজেই জানতে পারবে। তাদের লেনদেন, ঋণ ও বিনিয়োগসহ সবধরনের আর্থিক লেনদেন নজরদারিতে সহায়তা করবে।

তবে এতে ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়বে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আবার গ্রাহকদের মধ্যে ভীতি তৈরি হলে ব্যাংকে নগদ টাকা রাখা বা লেনদেন কমে যেতে পারে। ফলে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট তৈরি হতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল ১৩ কোটি ৬২ লাখের মতো। যেখানে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে, এমন অ্যাকাউন্টের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার। এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন (বিআইএন) নম্বরধারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৭ হাজার। যার মধ্যে গত মাসে কর রিটার্ন জমা হয়েছে ৩ লাখের বেশি।

অর্থাৎ, বিআইএন হোল্ডারদের এক-তৃতীয়াংশও রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। এমন আরও অনেক কর ফাঁকির কথা আইনজীবীরাও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন। তবে কারও যদি একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, সেসব অ্যাকাউন্টে তারা লেনদেন করে থাকেন, তাহলে সেসব অ্যাকাউন্টের তথ্যও আয়কর বিবরণীতে সংযুক্ত করতে হবে।  

অনেক সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসী। তিনি যদি রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় হন অথবা স্বামী বা স্ত্রী হন, তাহলে ওই অর্থের ওপর কোনও আয়কর হবে না। কিন্তু রক্তের সম্পর্কের বাইরে কেউ রেমিট্যান্স পেলে বা বিদেশ থেকে অ্যাকাউন্টে অর্থ এলে সেটার ওপর আয়কর প্রযোজ্য হবে। কেননা তখন সেই অর্থকে আয় বলে বিবেচনা করা হবে। 

ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঋণ নিলে এর ওপর কোনও আয়কর আরোপ হবে না। তবে শর্ত হচ্ছে সেই ঋণ ৩ বছরের মধ্যে পরিশোধ অথবা পরবর্তীতে নবায়ন করতে হবে। সবশেষ আয়কর নীতিমালা অনুযায়ী, পুরুষদের ক্ষেত্রে কারও যদি বার্ষিক আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা বা এর কম হয়, তাহলে মোট আয়ের ওপর কোনও আয়কর দিতে হবে না। নারীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৪ লাখ টাকা।

তবে আয় বার্ষিক সাড়ে ৩ লাখের বেশি হলে (নারীদের ৪ লাখ) মোট আয়ের পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকার ওপর মোট আয়ের ১০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।
পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর এবং পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। 

সাধারণত মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা অথবা বেশি হলে কিংবা বেসিক আয় ১৬ হাজার টাকা বা এর অধিক হলে আয়করের আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। নারী করদাতা এবং ৬৫ বছর বা সেটার চেয়ে বেশি বয়সী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৪ লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। গেজেট-ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৫ লাখ টাকা।

কোনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান ও পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বাবা ও মা দুজনই করদাতা হলে যেকোনো একজন এই সুবিধা ভোগ করবেন।

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে ৫ লাখ টাকার বেশি হিসাব খুলতে এখন থেকে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর ও সরকারি গেজেট অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২২-এর ৪৮ ধারা যথাযথ পরিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যদি ব্যাংক হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা অতিক্রম করে, তাহলে ব্যাংকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে। সেই সঙ্গে ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ আবেদনে বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে।

ব্যাংকে আমানত থেকে যে সুদ আয় হয়, রিটার্ন জমা দেয়া হলে ১০ শতাংশ হারে উৎস কর কেটে রাখে ব্যাংক। কিন্তু রিটার্ন জমা না দেয়া হলে ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখবে। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকে টাকা রাখলে কর কেটে রাখে সরকার। একে বলা হয় আবগারি শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি।

বছর শেষে আমানতকারীদের আ্যকাউন্টে যে পরিমাণ স্থিতি থাকে, সেটার বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখে ব্যাংকগুলো। পরে সেই অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। কারও ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে প্রযোজ্য হারে ওই টাকা আবগারি শুল্ক হিসেবে কর্তন করা হয়।

সাধারণত একজন গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যদি ১ লাখ টাকার কম জমা থাকে, তাহলে কোনও আবগারি শুল্ক আরোপ হয় না। তবে ১ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত থাকলে ১৫০ টাকা এবং ৫ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত থাকলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়।

এছাড়া ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় ৩ হাজার টাকা। ১ থেকে ৫ কোটি টাকায় ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ওপরে থাকলে ৪০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়। প্রতিবছর সঞ্চয়ী হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক কেটে রাখে ব্যাংক। মূলত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের সঞ্চয়ের ওপর ভিত্তি করে আবগারি শুল্ক কেটে নেয়া হয়।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032691955566406