যে চিঠি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ - দৈনিকশিক্ষা

যে চিঠি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ

দুলাল আচার্য |

বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিলো। সেদিন ভোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সহস্রাধিক সদস্য তার ধানমন্ডিস্থ বাসভবন সুধাসদন ঘেরাও করে। সেই সময় শেখ হাসিনা ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে বন্দি অবস্থায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে শেখ হাসিনার জামিন আবেদন আইন বহির্ভূতভাবে নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। শেখ হাসিনা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ মিনিটের অগ্নিঝরা বক্তৃতায় সেনা সমর্থিত সরকারের হীন-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দেশবাসীকে এই অন্যায় রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। 

২০০১ থেকে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সরকার সীমাহীন দুর্নীতি আর দুঃশাসন এবং একই সঙ্গে জঙ্গিবাদের উত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছিলো। তারা বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান সৃষ্টি করেছিলো। এসব কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিলো। তাই জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির বয়স বৃদ্ধিসহ প্রায় সোয়া কোটি ভুয়া ভোটার বৃদ্ধির অপচেষ্টা চালিয়ে ছিলো। এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল দেশের বিরোধীদল ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু যে বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতি, দুঃশাসনের মাধ্যমে দেশকে নরকে রূপান্তরিত করেছিলো সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সেদিন শেখ হাসিনাকে প্রথমে গ্রেফতার করে। অথচ শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে লড়াই করছিলেন।

আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর ক্রমাগত প্রতিরোধ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুকন্যার আপোষহীন ও দৃঢ় মনোভাব এবং সেসময় শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ লাখ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দেয়। দেশবাসীর অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুন দীর্ঘ ৩৩১ দিন কারাভোগের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে সেদিন প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়েছিলো। সে কারণে দেশবাসীর কাছে ১৬ জুলাই শুধু শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস নয়, গণতন্ত্রেরও বন্দি দিবস। এই মুক্তির মধ্য দিয়ে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে। তাঁর মুক্তি লাভের মাধ্যমে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিলো। বাংলাদেশের মানুষ বিশাল বিজয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিলো। সেই থেকে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের।  

উল্লেখ্য, গ্রেফতার পূর্ব মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একটি চিঠির মাধ্যমে দেশবাসীকে গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান। সেই চিঠিটি মিডিয়াসহ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটা বিশেষ দায়িত্ব পালনের সুযোগ হয় আমার। ১৭ জুলাই ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রকাশের প্রেক্ষাপট পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

১৬ জুলাই। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের এদিনে ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে জাতির উদ্দেশে তিনি একটি চিঠি লিখে যান; যা পরদিন জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রকাশ করে। শেখ রেহানা সম্পাদিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করার সুবাদে এবং সাংবাদিক বেবী মওদুদের স্নেহধন্য হওয়ায় সেই স্মৃতিময় ঘটনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো।

সেদিন ভোর ৬টায় রঞ্জনদার [বর্তমানে কলকাতা মিশনের প্রথম সচিব (তথ্য)] ফোনে আমার ঘুম ভাঙে। তিনি জানালেন, দুলাল আপাকে (শেখ হাসিনা) গ্রেফতার করেছে; টিভি খুলে দেখ। টিভিতে চোখ রাখতেই গ্রেফতারের প্রস্তুতি দেখে বিস্মিত হই।  

সকাল ৯.৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছি (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দুই বাড়ি আগে)। দেখি বেবী আপা টিভি রুমে। সিএসবি চ্যানেলটি সরাসরি শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার, আদালতে নেয়াসহ নানা দৃশ্য সম্প্রচার করছে। আমি পাশের একটি চেয়ারে বসি। আদালত এলাকায় গাড়ি থেকে নামানোর সময় টানাহেঁচড়ার দৃশ্য টিভিতে দেখে বেবী আপা হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে! তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। কেমন যেনো একটা শোকাবহ পরিবেশ। ঘণ্টাখানেক পর বেবী আপার মোবাইলে একটি ফোন এলো। তিনি কিছু না বলেই বের হয়ে গেলেন। 

দুপুর দুটার পর পরই বিচিত্রা অফিস ফাঁকা হয়ে যায়। চারদিকে এক ধরনের নীরবতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি। রাস্তায় লোকজন খুব কম। কেমন যেনো থমথমে ভাব। তাই সবাই বাসায় চলে যায়। অফিসে ওয়ালিদ, মনির ও আমি। ওয়ালিদ (বিচিত্রার সার্কুলেশন ম্যানেজার) বলল, চল, সবাই চলে গেছে আমরাও যাই। আপা (বেবী আপা) মনে হয় আজ আর আসবেন না। আমি বললাম, দাঁড়াও একটু অপেক্ষা করি। বিচিত্রার চাকরি জীবনের প্রায় নয় বছরে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। বেবী আপা অফিস থেকে যখনই বের হন না কেনো, প্রায় দিনই অফিস বন্ধ হওয়ার আগে একবার আসেন। না আসলে আগেই জানিয়ে দেন। বরাবরের মতো আমি আর মনির (অফিস সহকারী) অপেক্ষা করি। 

বিকেল তিনটার কিছু বেশি হবে। বেবী আপা তাঁর রুমে ঢুকেই মনিরকে ডাকলেন। ৪/৫ মিনিট পর আমি ইচ্ছা করেই আপার রুমে যাই। দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, আপা বইয়ের সেলফ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই বের করছেন, কিছু বই ইতোমধ্যে টেবিলেও রেখেছেন। আমাকে দেখে বললেন, দুলাল মনির আসুক, তোমাকে প্রেস ক্লাব যেতে হবে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম, কিছু বললাম না। বুঝলাম আপার মনের অবস্থা ভালো না। আপা বললেন, তুমি এখন যাও আমি ডাকবো। 

পাঁচ মিনিট পর মনির এসে বলল, দুলাল ভাই ফুপু ডাকছেন (মনির বেবী আপাকে ফুপু বলে সম্বোধন করতেন)। আমি আপার রুমের দিকে এগুচ্ছি, পেছনে মনির। মনির বলল, দুলাল ভাই ‘জরুরী’ খবর আছে।

আমি রুমে ঢুকতেই বেবী আপা বললেন, এখানে ২০ কপি আছে তুমি প্রেস ক্লাব গিয়ে আজাদের (বর্তমানে বাসসের এমডি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সেক্রেটারি) কাছে দেবে। আজাদকে তোমার কথা বলা আছে। প্যাকেটটি হাতে নিয়ে যাও। আমি বুঝতে পারলাম, এটা বড় আপার হাতের লেখা। কারণ, পাশেই মূল কপিটা রাখা ছিলো। আমরা বিচিত্রায় যারা চাকরি করতাম তারা সবাই শেখ হাসিনাকে বড়আপা এবং রেহানা আপাকে ছোটআপা বলেই ডাকতাম। বিচিত্রায় চাকরি করার সুযোগে শেখ হাসিনার হাতের লেখার সঙ্গে আমার একটা পরিচয় রয়েছে। তাঁর অনেক লেখা বিচিত্রায় কম্পোজ হতো এবং একপর্যায়ে সংশোধনের জন্য আমার কাছে আসতো। 

আমি আমার সিটে গিয়ে ব্যাগটি গুছিয়ে নিয়ে প্যাকেটটি ব্যাগের একটি ভাঁজে রাখলাম। ওয়ালিদকে বললাম উঠো। টেবিল ছেড়ে উঠতেই বেবী আপা ডাকলেন দুলাল। আমি কাছে যেতেই ১০০ টাকার একটি নোট দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি যাও, দেরি করো না। সাবধানে যেও। আর শোন, আজাদকে বলবা যারা আওয়ামী লীগ বিট করেন তাদের ফোনে ডেকে হাতে হাতে দিতে। ঠিক আছে আপা, বলেই আমি বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় নেমেই ওয়ালিদ বলল, আমি তোমার সঙ্গে নেই। আমি বুঝলাম এটি তার দুষ্টুমি। বেবী আপা আমাকে এর আগে যতো দায়িত্বই দিয়েছেন ওয়ালিদ কোনো না কোনোভাবে আমাকে সহায়তা করেছে। 

আমরা মিরপুর থেকে আসা একটি লোকাল বাসে প্রথমে নিউমার্কেট যাই। নিউমার্কেটে গিয়ে বাস আর যাবে না। পরে নিউমার্কেট থেকে রিকশায় প্রেস ক্লাব যাই। ওয়ালিদ প্রেস ক্লাবে না নেমে পল্টনে প্রেসে চলে যায়। প্রেস ক্লাব গেট থেকে আমি আজাদ ভাইকে ফোন দিই। তিনি বললেন আমি ভেতরে। আমি ভেতরে ঢুকে দেখি আজাদ ভাই মাঠে পায়চারি করছেন। প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সংখ্যাও আজ কম। 

আজাদ ভাই আমাকে দেখে বললেন কই দাও। প্যাকেটটি হাতে দিতেই তিনি কি যেনো বলতে চাইলেন। আমি বললাম, আজাদ ভাই বেবী আপা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিট যারা করেন তাদের ডেকে হাতে হাতে দিতে। তিনি আমার দিকে তাকালেন। আজাদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় মূলত বিচিত্রা অফিসেই। সম্ভবত ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে। তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উপদেষ্টা জাওয়াদুল করিম ভাই বিচিত্রা অফিসে (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) একটি কক্ষে বসতেন। সেখানে বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রেস সংক্রান্ত কাজ চলতো। শোকবাণী, বিভিন্ন জাতীয় ও  আন্তর্জাতিক দিবসের বাণী সবই তখন এখান থেকে দেয়া হতো। জাওয়াদুল করিম ভাইকে সহায়তার জন্য এক সময় আসলাম সানী ভাইকে নিয়োগ দেয়া হয়। বেবী আপার নির্দেশে আমিও জাওয়াদ ভাইকে সহায়তা করতাম। আজাদ ভাই আসার আগে এখানে কিছুদিন কাজ করেছিলেন পিআইডির সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (বর্তমানে প্রয়াত) হারুন-উর-রশিদ ভাই। আজাদ ভাই আসার পর হারুন ভাই আর আসতেন না। জাওয়াদ ভাই মারা যাওয়ার পর আজাদ ভাই পুরো দায়িত্ব নেন। সানী ভাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তারপর যতোদিন বিচিত্রা অফিসে নেত্রীর প্রেস অফিস ছিলো ততোদিন কম্পিউটার অপারেটর ফাতেমা কম্পোজ করতো। আমি তা সংশোধন করে দিতাম। অনেক সময় বেবী আপা আমাকে ফোনে বলতেন দুলাল অমুক...যাবে তাকে একটি শোকবাণী অথবা প্রেস সংক্রান্ত কোনো কাগজ রেডি করে রাখো। পরোক্ষভাবে সে সময় বেবী আপাও নেত্রীর প্রেসের কাজে যুক্ত ছিলেন। 

আজাদ ভাই পুরো চিঠিটা পড়লেন। আমি বললাম, আজাদ ভাই আমি কি আপনাকে কোনোভাবে সহায়তা করতে পারি। তিনি বললেন, তুমি কোনদিকে যাবে। আমি বললাম, মতিঝিলের দিকে। তিনি আমাকে ৬টি কপি দিয়ে বললেন। যাবার পথে এগুলো সংবাদ, যুগান্তর, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, অবজারভার অফিসে দিয়ে যাবে। একটা বেশি আছে প্রয়োজনে ফটোকপি করে নিও। প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে প্রথমে রঞ্জনদাকে ফোন দিলাম। রঞ্জন সেন (বিচিত্রার সাবেক কর্মী) তখন সংবাদের রিপোর্টার। রঞ্জনদা বললেন, আমি অফিসে। সংবাদে ঢুকেই রঞ্জনদাকে একটি কপি দিলাম। তিনি দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে বার্তা সম্পাদক হয়ে নির্বাহী সম্পাদকের রুমে গেলেন (সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল তখন নির্বাহী সম্পাদক)। খুব দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিলাম প্রথমে অবজারভার হয়ে যুগান্তর অফিসের উদ্দেশে। অবজারভার অফিসে রিসিপশনে দিয়ে বের হলাম যুগান্তরের উদ্দেশে। সেখানে নিচে দাঁড়িয়ে ফজলুর রহমানকে (তিনিও বিচিত্রার সাবেক কর্মী, বর্তমানে ডিবিসির বার্তা প্রধান) ফোন দিলাম। তিনি বললেন, ওপরে আসো। হাতে একটি কপি দিলে তিনি দ্রুত সাইফুল ভাইকে (বর্তমানে যুগান্তরের সম্পাদক) দিলেন। সাইফুল ভাই কোথায় পেলাম জানতে চাইলে বললাম বেবী আপা দিয়েছেন। সাইফুল ভাই এক নিশ্বাসে পড়ে আমার দিকে পরপর দুবার তাকালেন। বললেন, যাও সাবধানে যেও। ফজলু ভাই আমার সঙ্গে নিচে নামলেন এবং আমাকে বললেন, এখন কোথায় যাবে। আমি বললাম ইত্তেফাক, ইনকিলাব। ফজলু ভাই বললেন সাবধান! ব্যারিস্টার মইনুলের পত্রিকা কিন্তু...। 

আমি একটা রিকশা নিয়ে ইত্তেফাকের গেটে নেমে ওপরে উঠে প্রথম ফরাজী আজমল ভাইকে খুঁজলাম। দেখি তিনি অফিসে নেই। পরে জাহিদুর রহমান সজলকে খুঁজলাম, তিনিও বাইরে। আমার পরিচিতদের মধ্যে কেউ কেউ অফিসে থাকলেও তাদের কাছে দেয়ার সাহস করলাম না। নিচে নেমে দুটো খাম কিনে ভেতরে একটি করে কপি ইত্তেফাক ও ইনকিলাব পত্রিকার প্রেস রিলিজ বক্সে রাখি। পরে আজাদ ভাইকে ফোন দিই। তাঁকে বিস্তারিত বললাম এবং আমার কাছে একটি কপি আছে বললাম। তিনি বললেন ঠিক আছে, তুমি কাছাকাছি থেকো। প্রয়োজনে ফোন দেবো। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় যেতে ইচ্ছা হলো না। হাঁটতে হাঁটতে মতিঝিল মসজিদ মার্কেটে অর্থকণ্ঠ অফিসে গেলাম। পত্রিকাটির প্রকাশক আমার বন্ধু এনামুল হক এনাম। অফিসে বসে দুই গ্লাস পানি খেলাম। ভাবলাম বেবী আপাকে একটা ফোন দিই। 

প্রথমবার তিনি ধরলেন না। দশ মিনিট পর আবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেই বললেন, দুলাল বলো। আপাকে বিস্তারিত বললাম, তিনি বললেন ঠিক আছে বাসায় চলে যাও। 

এবার এনামের রুমে গিয়ে তার হাতে শেষ কপিটি দিই। তিনি পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই ৫টি ফটোকপি করিয়ে আনেন। কিছুক্ষণের মধ্যে অর্থকণ্ঠ অফিসের সবাই জেনে যায়। ওয়ালিদকে ফোন দিলাম। বলল, আমি প্রেসে, আসবা। আমি বললাম, মতিঝিল এনামের অফিসে আছি। মতিঝিল হয়ে যাও। সে বলল না দেরি হবে, তুমি চলে যাও, কাল সকাল সকাল অফিসে এসো। ঘরে ফিরতে মন চাইলো না, তাই এনামের অফিসে অনেক সময় কাটাই।

ঘড়ির কাঁটা নয়টা ছুঁই ছুঁই। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই, যানবাহনও কম, দু’একটা রিকশা চলছে। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই বাসায় চলছি। ভাবছি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ আর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ। ব্যবধান ৩৬ বছরের। স্বাধীনতার সমবয়সী আমি। আমার যখন জন্ম হয় তখন এদেশে চলছে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরতা। মা-বাবার কাছে শুনেছি, সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা। মার কোলে করে শরণার্থী হয়েছিলাম আমি। 

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ওয়্যারলেস মেসেজের কথা আজ ইতিহাসের অংশ। পেশার কারণে অসংখ্যবার পড়েছি। লেখায় ব্যবহার করছি। সেই বঙ্গবন্ধুর মেসেজটিতে জাতির জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন দেশবাসী সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমরা মুক্ত হলাম, দেশ স্বাধীন হলো। সেদিনও আমার মনে হয়েছিলো ৩৬ বছর পর অন্যায় শাসন আর অরাজকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা জেলে। তাঁর এই মেসেজটি (চিঠি) এদেশের জনগণকে উদ্দেশ করে লেখা। যে চিঠি আজ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ।

আমি বঙ্গবন্ধুর মেসেজ আর আজ তাঁর কন্যার মেসেজটি তুলনা করলাম। দুটোতেই মুক্তির কথা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে। দুটোই মুক্তির সনদ। একটি দেশকে শত্রুমুক্ত করে দেশ স্বাধীন করতে অন্যটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায়, অগণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতে। যে সংগ্রাম শেখ হাসিনা করে চলছেন দীর্ঘদিন ধরে। 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক 

হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037899017333984