জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া ব্যবস্থাকে প্রহসন উল্লেখ করে ওই দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তোলেন। তারা স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে দুই শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
বুধবার (১৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ন কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বাধ্যতামূলক ছুটির এ তথ্য জানানো হয়েছে।
দুই শিক্ষক হলেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহা। রেজুয়ান আহমেদকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিভাগীয় প্রধানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬ এর ১১(১০) ধারায় অধিকারপ্রাপ্ত ক্ষমতাবলে উপাচার্য কর্তৃক পরবর্তী সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক রেজুয়ান আহমেদ শুভ্র ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজন সাহাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হলো।
এদিকে, শিক্ষক সাজন সাহার হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর যৌন হয়ারির ঘটনার বিচার দাবিতে এদিন পাঁচ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, বিজ্ঞান, প্রশাসনিক, প্রক্টর ও ব্যাংকে এ তালা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। গত সোমবার (১১ মার্চ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি তদন্ত সাপেক্ষে মেনে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন উপাচার্য।
পরে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চার ঘণ্টা আলোচনা করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া মেনে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের আশ্বাসে আস্থা রেখে পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন। এরপর আজ ফের আন্দোলন শুরু করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই দুই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া ব্যবস্থাকে প্রহসন উল্লেখ করে ওই দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি তোলেন। তারা বলেন, তারা বাধ্যতামূলক ছুটি মানতে চান না। শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে কলা অনুষদ ভবনের সামনে এদিন দুপরের পরে সাজন সাহা ও শুভ্রর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
গত ৪ মার্চ শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রথম হেনস্তার বিষয়টি সামনে আসে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মধ্যরাতে চা পানের নিমন্ত্রণ, অংক বুঝাতে ব্যক্তিগত চেম্বারে ডাকা ও প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় নম্বর কমিয়ে দেওয়া এবং থিসিস রিপোর্ট তৈরিতে হয়রানি করার অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।
ছাত্রীদের শাড়ি পরে তার সঙ্গে দেখা করতে বলা, ইনবক্সে ছবি চাওয়া, রিকশা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, ক্যাম্পাসের বাইরে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার নিমন্ত্রণ, ম্যাসেঞ্জারে অন্তরঙ্গ ভিডিওর লিংক শেয়ার করার মতো নানান অভিযোগ আসে শিক্ষক সাজন সাহার বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাজন সাহার কাণ্ডে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন বিভাগীয় প্রধান শুভ্র।