রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে একাডেমিক সভায় অশালীন ভাষা ব্যবহার করে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।
১৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১১২ তম সভায় এ ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে ২০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের নিকট একটি চিঠিতে বিস্তারিত উল্লেখ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহবান জানান।
উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে অধ্যাপক মামুন লিখেছেন, 'গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১১২তম সভা ছিল। উক্ত সভায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কিছু একাডেমিক বিষয় উপস্থাপন করার জন্য আমি উপস্থিত হই। এবিষয়ে কিছু আইনগত ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছিলো। ডিন মহোদয় এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শমূলক কথা বলার এক পর্যায়ে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছেন, 'তিনি বলেন যে, তুমি একজন অযোগ্য চেয়ারম্যান, তুমি কোন নিয়ম-কানুন জানো না, আমার জীবনে এমন অযোগ্য ও অপদার্থ চেয়ারম্যান দেখিনি। আমি প্রতিবাদ করে বলি যে, এরকম একটি একাডেমিক সভায় আপনি এ ধরণের ভাষা প্রয়োগ করতে পারেন না। আপনি আপনার আলোচনা অ্যাকাডেমিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন। তিনি এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন যে, তোমার সাথে কীভাবে কথা বলবো? তুমি তো একজন বেহায়া চেয়ারম্যান। কেউই তোমাকে চায় না তবুও তুমি বেহায়ার মতো চেয়ারম্যান পদ আকঁড়ে আছো। আমি তাকে বলি যে, আপনি কিন্তু শিষ্টাচার রক্ষা করছেন না। আপনি এভাবে আমাকে অপমান করে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু তিনি অত্যন্ত অশালীন ভাষায় আমাকে অপমান করেন।
অধ্যাপক মামুন আরও লিখেছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিভাগের কারিকুলাম কমিটি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধানের বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে তার অফিসে গেলে তিনি আমকে বলেন যে, তুমি আমার অফিসে ঢুকবে না। আমি বলি, এটা আপনি বলতে পারেন না। একজন চেয়ারম্যান ডিনের অফিসে আসবে, ডিন তাকে এভাবে চলে যেতে বলতে পারে না। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন যে, যদি তুমি না যাও তবে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেব। তার এ অশালীন আচরণে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে যায়। অতঃপর আমি চলে আসি।
অপমানিত করার কারণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মামুন লিখেছেন, তিনি (ড. মো. ইলিয়াস হোসেন) আমার বিভাগে একসময় খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। অর্থনীতি বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ওয়াদুদ যখন চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করে পাঠালে উক্ত বিভাগের সভাপতি চিঠিটি ফেরত পাঠান; ফলে আমরা প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস হোসেনকে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারিনি। প্রফেসর ইলিয়াস হোসেন তখন আমাকে এ ব্যাপারে তার পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমি এ বিষয়ে কিছু করতে পারিনি। এছাড়া আরও কিছু বিষয়ে সম্ভবত তিনি আমার উপর প্রসন্ন ছিলেন না।
এঘটনায় তিনি মানসিকভাবে আহত হয়েছেন উল্লেখ করে লিখেছেন, 'একটি একাডেমিক সভায় এবং লোকজনের উপস্থিতিতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডিন এ ধরণের ভাষা প্রয়োগ করতে পারেন- এ আমার বোধের বাইরে। তার এ ধরণের অশালীন ব্যবহার কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। এ ধরণের অপমানজনক ব্যবহারের মুখোমুখী হয়ে আমি মানসিকভাবে এতোটাই আহত যে কোন কাজে সহজে মনোসংযোগ করতে পারছি না। আমি এর প্রতিকার চাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌহাদ্যপূর্ণ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার স্বার্থে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, এই বিষয়ে আমি কথা বলব না। এই বিষয়ে ওকেই জিজ্ঞেস করেন।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, চিঠিতে সকল কিছু বলা আছে। আমার সাথে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এর প্রতিকার চেয়ে আমি উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছি।