আটকে থাকা পরীক্ষা চালু ও সেশনজট নিরসনে চার মাসে সেমিস্টার শেষ করাসহ চার দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিভাগের সভাপতি ও অফিসকক্ষে তালা দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। পরে বেলা সোয়া ১টার দিকে উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে তালা খুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আটক শুধু আমরাই, অন্য বিভাগের পরীক্ষা তো বন্ধ নাই’, ‘এক বছরে এক সেমিস্টার, ধিক্কার ধিক্কার’, ‘রেজাল্ট কেন দশ মাসে, রেজাল্ট চাই একমাসে’, ‘শিক্ষকদের স্বৈরাচার, চলবে না চলবে না’, ‘গুটি চালানো বাদ দেন, আমাদের মুক্তি দেন’, ‘মিষ্টি কথা বাদ দেন, চার দফা মেনে নেন’, ‘আর নয় বাড়াবাড়ি, পরীক্ষা চাই তাড়াতাড়ি’, ‘পরীক্ষা কেন ধীর গতি, কী করছেন সভাপতি’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো—
১. ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা দশ মাস পর শুরু হয়। তবে মাত্র দুটি কোর্সের পরীক্ষা নেয়া হলেও বাকি পরীক্ষাগুলো নেয়া হচ্ছে না। আটকে থাকা কোর্সগুলোর রুটিন আজকের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
২. ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের দশ মাস ক্লাসের পরও পরীক্ষার ফরম-পূরণের তারিখ দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে ফরম-পূরণের তারিখসহ পরীক্ষার রুটিন দিতে হবে।
৩. অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের তদন্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা এবং পাশাপাশি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে কী ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে সেটি শিক্ষার্থীদের জানানো।
৪. বিভাগে সেশনজট নিরসনে চার মাসে সেমিস্টার শেষ করা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বিভাগে নানা অনিয়ম চলছে। ছয় মাসের সেমিস্টার শেষ করতে সময় লাগছে এক বছর। এক মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও ৮-১০ মাস পর ফলাফল করা হয়। ইনকোর্স পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়া হয় না।
এ বিষয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান ফাহাদ বলেন, ‘আমাদের চার দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য বিভাগের সভাপতিকে দুদিন সময় বেঁধে দিলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এজন্য আমরা বিভাগে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।’
এদিকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল, অধ্যাপক আ-আল মামুন, অধ্যাপক মশিহুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক শাতিল সিরাজসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাবিগুলোর বিষয়ে কথা বলতে আসেন। এ সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন।
তবে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের তদন্তে বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকে সহযোগিতা করার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। পরে বিভাগের শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এ সময় উপাচার্য মতানৈক্যের সেই দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলে তাঁরা বিভাগে ফিরে যান। এরপর তারা তালা খুলে দেন।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দুপুরের মধ্যেই উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের সব দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। তবে একটি দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল। পরে সে বিষয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি (উপাচার্য) শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন যে, বিষয়টি ইতিমধ্যেই সিন্ডিকেট সভার আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’