লক্ষ্য হোক মনুষ্যত্ব অর্জন - দৈনিকশিক্ষা

লক্ষ্য হোক মনুষ্যত্ব অর্জন

অলোক আচার্য |

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলো। পাস-ফেলের হিসাব নেওয়া হচ্ছে। যারা এ-প্লাস পেয়েছেন, তারা ফেসবুকে তাদের ছবি ও ফল দেখাচ্ছেন। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, যারা এ গ্রেড পেয়েছেন, তারা কিন্তু কেউ নিজেদের ফলাফল প্রকাশ করছেন না। এ-প্লাস ও গোল্ডেন এ-প্লাস প্রাপ্তদেরই যেখানে জয়গান, সেখানে তারা লজ্জিত! যদিও লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ আমি দেখি না। যার যেটুকু অর্জন-সেটুকু নিয়েই তৃপ্ত থাকার মানসিকতা তৈরি হওয়া উচিত এই স্তর থেকেই। নিজের দুর্বলতাগুলো ঝালিয়ে নিয়ে সমানে এগিয়ে যাওয়া দৃঢ়তা অর্জন করতে হয়। এ-প্লাসের ছড়াছড়িকেই আজকাল সন্দেহের চোখে দেখা হয়। আর জীবনে সফলতা লাভের সূত্র এই রেজাল্ট নয়। এই সত্যটি তারা বোঝেন না। তাদের কেউ বোঝাতেও যান না। তাদের পরিবারও তাদের পাশে নেই।  শতভাগ পাস এবং শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। এ বছর ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেননি। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে যখন এ প্লাস প্রাপ্তি সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ কিভাবে পাস করে না-তা বোধগম্য নয়। কোথায় কতজন পাস কতজন ফেল করেছেন তা বের করা হয়েছে। পাসের হার ছেলে না মেয়েদের বেশি তাও নির্ণয় করা হয়েছে। এবারেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। 

যাদের সন্তান সামান্য পয়েন্টের জন্য এ-প্লাস বা গোল্ডেন এ প্লাস পাননি তারা হতাশ। কিন্তু তাদের হতাশ হওয়ার খুব বেশি কারণ নেই। নিজের সন্তানকে বোঝাতে হবে যে, এই গ্রেড পাওয়াই জীবনের একমাত্র প্রাপ্তি নয়। প্রতিযোগিতা ভালো। তবে তা জীবনের বিনিময়ে অবশ্যই নয়। এই প্রতিযোগিতার চিন্তা তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ভালো মানুষ হওয়ার উৎসাহ দিতে হবে। আজ ফল খারাপ হয়েছে তবে ভালো করার সুযোগও তো আছে। সবাই চাই কেবল পাসের হারে বৃদ্ধি না বরং মেধার হারে বৃদ্ধি ঘটুক। মেধাবী শিক্ষার্থী যাচাইয়ে যদি পাসের হার কমে তাহলে একটুও আফসোস নেই। কারণ, কয়েকজন নামমাত্র শিক্ষিত বেকার যুবকের চেয়ে একজন প্রকৃত মেধাবী দরকার।সেই একজন বাকিদের কাজের ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। সফলতা এবং ব্যর্থতা- জীবনের এই দুটি দিক গ্রহণের মানসিকতা থাকা উচিত। প্রকৃতপক্ষে সঠিক মূল্যায়ন বলতে সেই পরিমাপ কতটা সঠিক তা বলা যায় না। কারণ, আজকাল বিভিন্ন পদ্ধতি বারবার পরিবর্তন করা হয়।  

পরীক্ষা মানে পাস আর ফেল। যারা পাস করছেন তারা নিঃসন্দেহে মেধাবী। কিন্তু যারা পাস করছেন না-তারা কি মেধাশূন্য কোন একটা বা দুটি বিষয়ে ফেল করলেই কি তার মেধা নেই-বলা যেতে পারে শুধু ফলাফল দিয়ে নিশ্চয়ই কোন ছাত্রছাত্রীর মেধা পরীক্ষা করা যায় না। স্কুল কলেজের পাস-ফেল শুধু সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে স্কুলে ছাত্র হিসেবে খুব খারাপ হয়ে পরবর্তী জীবনে বড় বড় ব্যক্তিদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন। এই সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। তাহলে পাস ফেল এবং মেধা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও, নির্ভর নয়। যে শিক্ষা মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে না তার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কোনমতে একটা সার্টিফিকেট পেলেই সব শেষ। তারপর এদিক-সেদিক ধরাধরি করে একটা চাকরি বাগিয়ে সমাজে দিব্বি মেধাবী সেজে ঘুরে বেড়ানো যায়। এক সময় দেশে পরীক্ষায় নকল করার একটা প্রবণতা ছিল। তখন পাসের হারও কম ছিল। কিন্তু সবাই নকল করতে পারতো না। তবে আশ্চর্যের বিষয়, কিন্তু সেটা নয়। বিষয় হলো, সে সময় পরীক্ষার কেন্দ্রে অসুদপায় অবলম্বন করলেও শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতো না। কে পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল করেছে-সে বিষয়টার সাক্ষী কেবল আরেক পরীক্ষার্থী থেকে যেত। আজ কেন্দ্রের সামনে লেখা থাকে নকলমুক্ত পরীক্ষা কেন্দ্র। তবে শিক্ষার্থীদের মেধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় কেন!  

একটু গ্রেড কম পেলে বা গোল্ডেন এ প্লাস না পেলেই জীবনে সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। হতাশার কিছু নেই। বরং অন্য কোন বিষয়ে তার আগ্রহ আছে ধরে নিতে হবে। জীবনের সাফল্য- ব্যর্থতা নির্ভর করে মনুষ্যত্ব অর্জনে। একজন সৎ সাধারণ মানুষ একজন দুর্নীতিগ্রস্থ অফিসারের চেয়ে দেশের জন্য প্রয়োজন বেশি। আর তাই যারা পরীক্ষায় ফেল করেছে বা আশানুরূপ ফল করতে পারেনি তারা যেন সব শেষ হয়ে গেছে এটা মনে না করেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সঙ্গ দিতে পারেন সন্তানের অভিভাবক। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখা দরকার। দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীই প্রয়োজন। পাসের হার বৃদ্ধি করে আপাত শিক্ষার প্রসার হলেও মান না বাড়লে স্থায়ী ক্ষতি হয়। তাই আমরা চাই আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থায় মেধার বিকাশ ঘটুক। শেষ পর্যন্ত যদি কোন ছাত্রছাত্রী পাস না করতে পারেন তার জন্য প্রচলিত সংস্কৃতি অনুসারে তার ফেল করার কারণ উদঘাটন করতে ব্যস্ত না হয়ে তাকে বোঝানো যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তো সে অবশ্যই জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। জীবনযুদ্ধের পরীক্ষার মত কঠিন পরীক্ষা আর কি আছে। নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব এসব লেখাপড়ার রেজাল্ট দিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এটা দিতে পারছে না। এ কারণেই চারদিকে দুর্নীতির বীজ। জিপিএ ফাইভ নিয়ে পাস করাটাকে আমরা যত সহজে প্রচার করি ফেল করাটাকে গ্রহণ করার মন-মানসিকতা আজও গড়ে ওঠেনি। যারা পাস করতে পারেননি বা যারা এ প্লাস পাননি-তাদের সকলের জন্য রইলো শুভকামনা। 

লেখক : অলোক আচার্য, প্রাবন্ধিক ও কলামিষ্ট

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062060356140137