জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২৩টি লেগুনা আটকে রেখে 'চাঁদা' দাবির অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকে রেখেছে।
অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, শাহ পরাণ ও হাসান মাহমুদ ফরিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও লেলিন মাহবুব এবং উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল-রাজি সরকার প্রমুখ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টা দিকে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লেগুনাগুলো আটকানো শুরু করেন ওই হলের নেতাকর্মীরা। ওইদিন রাত ১০ টা পর্যন্ত ৩০ টি লেগুনা আটক করেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চলে যান। পরে ওই রাতে ১৯টি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হলেও ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকিয়ে আটকে রাখা হয়।
এদিকে বুধবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতারা আরো ১২টি লেগুনা আটক করেন বলে অভিযোগ লেগুনা চালকদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন পাশের রাস্তায় ২৩টি লেগুনা সারিবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো চালকরা নিতে গেলে তাদেরকে শিক্ষার্থীরা বাধা প্রদান করে মালিকপক্ষকে আসতে বলে।
লেগুনাগুলোর চালকরা বলেন, হেমায়েতপুর থেকে আশুলিয়া ও বিরুলিয়া রুটে প্রতিদিন ৭টি ব্যানারের প্রায় ২ শতাধিক লেগুনা নিয়মিত চলাচল করে। মহাসড়কে অনুমতি না থাকায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ইউনার্ট নিতে বাধা যেন না দেয় সেজন্য প্রায় গত ১ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের দৈনিক ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সে হিসেবে মাসিক প্রায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতো মালিকপক্ষ। তবে বিগত দুই মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিলো বলে জেনেছি। তার প্রেক্ষিতে আবারও লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের চুক্তি করতে চায় ছাত্রলীগ নেতারা। এবার লেগুনা প্রতি ১০০ টাকা দাবি করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তবে তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালিক পক্ষ। তাই লেগুনাগুলো আটকে রাখা হয়েছে।
লেগুনা মালিক সমিতির একাংশের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাসড়কে লেগুনা চালানোর অনুমতি না থাকায় বিভিন্ন মহলকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকেও টাকা দেওয়া লাগে। তবে আয় কমে যাওয়ায় গত ২ মাসে ছাত্রলীগকে তেমন কোন টাকা দেওয়া হয়নি। এজন্য তারা লেগুনা আটক করেছে।
এদিকে লেগুনা আটকানোর কারণ জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী একটি লেগুনা মীর মশাররফ হোসেন হল গেইট (এমএইচ গেইট) এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র তানভীর ও তারেকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এসময় তারেক ও তানভীর আহত হয়। তার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে তিনটি লেগুনা আমাদের হলের শিক্ষার্থীরা আটক করে। কিন্তু ওই লেগুনাগুলো পালিয়ে গেলে পরবর্তীতে বাকি লেগুনাগুলো আটক করে হলের ছাত্ররা। আমাদের দাবি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন মহাসড়কে না চলে। এখানে 'চাঁদা' দাবি বা অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
তবে লেগুনার ধাক্কায় নিজেদের শারীরিক কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তারেক।
তারেক মীর বলেন, আমি ও তানভীর সাভারে চুল কাটানোর জন্য মোটরসাইকেলে রওনা হই। এমএইচ গেইট এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি লেগুনা আমার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। তবে বাইক নিচে না পড়ায় আমরা কেউ আহত হইনি। আমার তেমন কোন দাবি নেই, সিনিয়ররা যা বলে তাই হবে।
তানভীর বলেন, আমাদের মোটরসাইকেলের পেছনে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। পরে তিনটি লেগুনা আটকে রাখি, তবে তারা কিছু না বলেই নকল চাবি দিয়ে চলে যায়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আজিজুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা লেগুনা আটক করেছে। কেন আটক করেছে- এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। এটা আপনি আমার চাইতে ভালো জানেন।
মহাসড়কে লেগুনা চলার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মওদুদ আহমেদ বলেন, শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২জন ছাত্র মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় একটি লেগুনা তাদেরকে ধাক্কা দেয়। তবে তারা কেউ আহত হয়নি। এখন ছাত্ররা লেগুনার ফিটনেস ঠিক করার দাবিতে লেগুনাগুলো আটক করেছে বলে জানায়। তবে শিক্ষার্থীদেরকে লেগুনাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে না রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।