বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ক্ষণজন্মা জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়। ৩৫ বছরের কম সময় ধরে বেঁচে থাকা সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ এই নন্দিত শিশুসাহিত্যিক রেখে গেছেন সাতিহ্যকর্ম, যেগুলো বর্তমান সময়ে এসেও বর্তমান শিশু সাহিত্যে বেশ প্রাসঙ্গিক। সুকুমার রায়ের শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার রচনাকর্মের উপর তুলির আঁচড়ে ফুটে তুলেছেন ভারতীয় শিল্পী অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস।
সুকুমার রায়ের শততম মৃত্যুবার্ষিকীতে ৩৯টি ছবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সস্টিটিউটের জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শনীর পসরা সাজিয়েছেন অনিন্দ্য। ছবিগুলো শুধু নিরেট না, সুকুমার প্রেমীদের কাছে এসব চিত্রকর্ম একেকটি চরিত্র ; যেন চরিত্রই কথা কয়। জয়নুল আর্ট গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, সুকুমার রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি রামগরুড়ের ছানা, হাতিমি, টিয়ামুখো গিরগিটি, হ্যাংলাথেরিয়াম, ল্যাগবার্গনিসসহ বিচিত্র সব চরিত্র।
তুলির আঁচড়ে ফুটে তোলা এসব অনবদ্য চিত্রকর্মের শিল্পী অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাস বলেন, কথাও যে ছবি হতে পারে, সুকুমার রায় সেটিই শিখিয়েছেন। এর আগে ছবিগুলো নিয়ে কলকাতার কালীগঞ্জের চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে একটি প্রদর্শনী হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রজন্মের অনেক শিশু-কিশোর তাঁকে চেনে না। সুকুমার রায়ের চর্চা বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে এসেও তিনি প্রাসঙ্গিক। একবিংশ শতকে সুস্থ থাকার জন্য তার চর্চা বাড়ানো প্রয়োজন। আমি মনে করি এসব প্রদর্শনী সুকুমার রায়কে নতুনভাবে চেনাতে সাহায্য করবে।
মৃত্যুর ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও কালজয়ী জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায় আজও অনাবিষ্কৃত রয়েই গেছেন বলে মনে করেন অনিন্দ্য। তিনি বলেন, তার মৃত্যুর ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাকে আমরা সুকুমার রায়কে সম্পূর্ণরূপে আবিষ্কার করতে পারিনি। অনেকেই সুকুমার রায়কে শুধু শিশুসাহিত্যিক চেনেন, কেউ হয়তো এর থেকে একটু বেশি তাকে চিত্রশিল্পী হিসেবেও জানেন। কিন্তু সুকুমার রায় তার ননসেন্স রাইমের বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মকভাবে ইংরেজ শাসনের প্রতিবাদ করেছেন, তা এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। সুকুমার রায়কে নিয়ে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে।
সুকুমার রায়কে ইতিহাসের অতল গহ্বর থেকে যেন হারিয়ে না যায় তাকে বাঁচিয়ে রাখতে; তাকে নিয়ে গবেষণা, আলোচনা, চর্চা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুকুমার রায় ফাউন্ডেশন গঠন করা যেতে পারে।
শুক্রবার সমাপণী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে থেকে শেষ হতে যাচ্ছে গত সোমবার (৯ অক্টোবর) অনিন্দ্য কান্তি বিশ্বাসের প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এ প্রদর্শনী।
প্রসঙ্গত, ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন নন্দিত শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়। তার বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী বাংলা শিশুসাহিত্যের আরেক দিকপাল। সুকুমার রায়ের প্রধান অবদান শিশু-কিশোর উপযোগী বিচিত্র সাহিত্যকর্ম। কবিতা, নাটক, গল্প, ছবি সবকিছুতেই তিনি সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ ও কৌতুকরস সঞ্চার করতে পারতেন। তাঁর কাব্যে হাস্যরসের সঙ্গে সমাজচেতনাও প্রতিফলিত হয়েছে। আবোল-তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাগলা দাশু, বহুরূপী, খাইখাই, অবাক জলপান, শব্দকল্পদ্রুমসহ নানা জনপ্রিয় কালজয়ী রচনার সৃষ্টি সুকুমার রায়। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন তিনি।