দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও লেখক শহীদুল্লাহ কায়সারের আজ জন্মদিন।
তিনি ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পিতা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তার অনুজ।
শহীদুল্লাহ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। ছাত্রজীবনে তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি মূলত সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করতেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ধারার সব আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তিনি শ্রমিক-জনতার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন-এ তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং ৩ জুন গ্রেফতার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর সামরিক শাসক কর্তৃক তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভ করেন।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় শহীদুল্লাহর সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংবাদ পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন; এখানেই তার সাংবাদিকতা ও সাহিত্যকর্মের গৌরবময় অধ্যায় রচিত হয়।
শহীদুল্লাহ কায়সারের প্রধান উপন্যাস সারেং বউ এ মানুষ ও তার অস্তিত্বের সংগ্রামের কথা বর্ণিত হয়েছে। তার কাম্য ছিলো সুস্থ ও পরিশীলিত জীবনভিত্তিক একটি উন্নত সমাজ। সংশপ্তক, কৃষ্ণচূড়া মেঘ, তিমির বলয়, দিগন্তে ফুলের আগুন, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, চন্দ্রভানের কন্যা, কবে পোহাবে বিভাবরী (অসমাপ্ত) তার অন্যান্য উপন্যাস। রাজবন্দীর রোজনামচা ও পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ তার স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত।
শহীদুল্লাহ কায়সার সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তিনি অপহৃত হন এবং আর ফিরে আসেন নি।