ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় কলেজছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু ও তার বাবা উজ্জ্বলকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে ৩৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক। সোমবার (৩ জুলাই) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি উজ্জ্বল ঘটনার পর আসামি জিতুকে অর্থ জোগান দিয়ে আত্মগোপনে থাকার সহায়তা করেন। তবে মামলার ঘটনার সঙ্গে অপর কোনো অজ্ঞাতনামা আসামি সংশ্লিষ্ট থাকার স্বপক্ষে কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। আসামি জিতু গুরুতর আঘাত করে উৎপলকে হত্যা করেছে এবং উজ্জ্বল তাকে পলাতক থাকতে সহায়তা করেছেন।
সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় আসামি জিতু ও উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩০২/২১২ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মামলার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী উৎপল কুমার সরকার এ প্রতিষ্ঠানের সচেতন শিক্ষক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নীতিনৈতিকতার বিষয়টি দেখাশোনা করতেন। ২০২২ সালের ২৫ জুন দুপুর দেড়টার দিকে চিত্রশাইল হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলাকালে আসামি জিতুসহ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেআইনি জনতা বন্ধে কলেজ প্রাঙ্গণে এসে উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার উদ্দেশে মাথায় ও কপালে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এছাড়া ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করে গুরুতর আহত করে।
আসামি জিতু ক্রিকেট স্ট্যাম্পের সুঁচালো অংশ দিয়ে হত্যার উদ্দেশে উৎপলের ডান ও বাম পাশের পেটে গুরুতর জখম করে। পরে উৎপলকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুন তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় উৎপলের ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর ২৮ জুন রাতে জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ২৯ জুন আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ৫ জুলাই তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ মামলার প্রধান আসামি জিতুকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরবর্তী সময়ে ৬ জুলাই জিতু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ মামলায় জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন। তবে জিতু কারাগারে।