শিক্ষক মো. ইউসুফ আলীর বয়স ৫৮ বছর ছুঁই-ছুঁই। মাত্র এক বছরের কিছু সময় পরই ইতি টানবেন শিক্ষকতা জীবনের। তবুও রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বরগুনা সদর উপজেলার নলি মুসলিম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবীণ এ সহকারী শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থানের দশম দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দৈনিক শিক্ষাডটকমের সঙ্গে কথা হয় প্রবীণ এ শিক্ষকের। মো. ইউসুফ আলী জানান, গত সোমবার আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকা এসেছেন তিনি।
শিক্ষকতা জীবনের শেষে এসেও আন্দোলনে যোগ দেয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, চাকরির শেষে এসে যদি কিছু একটা হয়। আমাদের বেসরকারি শিক্ষকদের তো আর পেনশনের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু যদি জাতীয়করণ হয়, ভবিষ্যতে শেষ বয়সে পেনশনের আওতাভুক্ত হতে পারলে কিছু টাকা পেয়ে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে পার করতে পারবে। এ আশা থেকেই আন্দোলনে আসা।
শিক্ষক ইউসুফ আলী আরো বলেন, অবসরের পর আমার তিন মেয়ে কি করবে, না করবে বুঝতে পারছি না! পেনশনের মধ্যে থাকতে পারলে জীবনটা সুন্দর মতো কাটবে। আর এখনতো অবসরে গেলে ৩ থেকে ৫ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর অবসর ও কল্যাণ সুবিধার নাম-মাত্র কিছু টাকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে বেঁচে থাকতেও পারি, আবার নাও পারি। যদি বাঁচি তাহলে তো পেতেও পারি, না বাঁচলে ওয়ারিশ যারা আছে তারা পেলেও পেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এখন জাতীয়করণ যদি না হয়, বাকি জীবনটা দূর-সম্পর্কের এক আত্মীয়ের ফার্মেসি আছে। সেখানে যদি কিছু করার যায়।
প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে গত ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিনে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানো কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত রোববার থেকে ওই কর্মসূচি শুরু হয়। গত সোমবার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। পরদিন মঙ্গলবার শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। পরে গতকাল বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গেও আলোচনা করেন শিক্ষক নেতারা। আশানরূপ ফল না পাওয়ায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।