শিক্ষকদের আতঙ্কের নাম মিনিস্ট্রি অডিট! - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকদের আতঙ্কের নাম মিনিস্ট্রি অডিট!

মো. ইউসুফ আলী |

সরষের ভূত তাড়াবে কে? বহুল প্রচলিত প্রবাদটি আমাদের সমাজের বাস্তবতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিট নিয়মিত কার্যক্রম। অডিটের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত রাখার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। আফসোস যে মহৎ উদ্দেশ্যে অডিট করার কথা তা না হয়ে উল্টো দুর্নীতির অনুমোদন দিয়ে আসে! দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এমন একটি অডিটর পেলাম না, যে নাকি সেলামি না নিয়ে ফেরত গেছে। একটি স্কুলে অডিটে গুরুতর কোনো দুর্নীতি না পেয়ে ঠুনকো দুই চারটি  অনিয়ম নোট করলেন অডিটর। অনিয়ম গুলোর মধ্যে ছিলো শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ছুটির সব দরখাস্ত না থাকা, কোনো শিক্ষকের স্নাতক ডিগ্রির মূল নম্বর পত্র দেখাতে না পারা ( মাস্টার্স করার জন্য নম্বর পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা ছিলো)।

অডিট শেষে অডিটর সাহেব হেড মাষ্টারকে সন্ধ্যার পর উপজেলা সার্কিট হাউসে দেখা করতে বললেন। তো সন্ধ্যার পর হেড মাষ্টার সাহেব নিজে না গিয়ে অফিস সহকারী ও একজন শিক্ষককে পাঠালেন।

হেড মাষ্টার না আসায় অডিটর সাহেব খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। শিক্ষকদের কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করলেন, না দিলে এমপিও স্থগিতের ভয় দেখালেন। উনারা অনেকটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিষয়টি হেড মাষ্টারকে জানালেন। হেড মাষ্টার সাহেব সাফ জানিয়ে দিলেন কোনো ঘুষ দেয়া হবে না। হেড মাষ্টারের কঠোর অবস্থান দেখে শিক্ষকেরা আরো ঘাবড়ে গেলেন এবং শিক্ষক নিজেরা ১০ হাজার টাকা দিয়ে অডিটরের সঙ্গে দফারফা করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের সততার কারণে অডিটরকে ঘুষ না দেয়ার সাহসিকতা দেখাতে পেরেছিলেন। পক্ষান্তরে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য অডিটররা প্রতিষ্ঠান থেকে ১  থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে থাকে। আর এ টাকা শিক্ষকদের কাছ থেকেই প্রধান /অধ্যক্ষ আদায় করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট নামে প্রতারণার কারণে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দুর্নীতিতে উৎসাহ পেয়ে আসছে। প্রতারণার অডিট সংস্কার ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অডিট বন্ধ রাখা সময়ের দাবি। সংস্কারের জন্য কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। বর্তমানে ডিআইএ কর্মরত সকলকে সরিয়ে নতুনভাবে পদায়ন করা। পদায়নের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গঠন করে যে সব শিক্ষককের  সততা ও দেশ প্রেমের কমতি নেই এমন শিক্ষককের তালিকা করে ডিআইএ পদায়ন করা। একজন অডিটর দুইটি প্রতিষ্ঠান অডিট করার পর উনাকে শিক্ষকতা পেশায় ফিরিয়ে নেয়া। পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা। অডিট রিপোর্ট কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকে অবহিতকরণের জন্য উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা। অডিট রিপোর্টের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের যাচাই কমিটি গঠন করা যেতে পারে যেখানে নিয়মিত কমিটির কোনো সদস্য থাকবে না। প্রশ্ন উঠতে পারে নিয়মিত কমিটি থাকতে আরো কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা কী? এ ছাড়া এতে নিয়মিত কমিটির অবমূল্যায়ন করা হবে না ? সমাজে একটা প্রবাদ আছে ‘যে যায় লঙ্কায়,সেই  হয় রাবণ।’ শিক্ষায় দুর্নীতি অতীত থেকেই চলে আসছে। তবে বিগত আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষায় দুর্নীতি সকল সীমা অতিক্রম করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান জোর গলায় বলেছেন,আমরা প্রিজাইডিং অফিসাররাই আওয়ামী  লীগকে বারবার ক্ষমতায় এনেছি। প্রতিদান হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ বাণিজ্যসহ প্রতিষ্ঠানের তহবিল তসরুপ করলেও জন প্রতিনিধিরা নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এতো নিম্ন স্তরে চলে গেছেন পিওন নিয়োগেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এবারই প্রথম রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের সঙ্গে কিছু দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠান প্রধানও শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কর্তৃক চরম অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছেন।
 

যাচাই কমিটি অডিটরের প্রতিবেদন যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় মতামত শিক্ষায় অংশীজনের কাছে  উন্মুক্তভাবে তুলে ধরবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। অডিটরের প্রতিবেদন যাচাই কমিটি কর্তৃক  বড় ধরনের ঘাপলা পরিলক্ষিত হলে অডিটর ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে শাস্তির আওতায় আনা। অসৎ,দুর্নীতিবাজ প্রধানদের কারণে ডিআইএ এর অডিটররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মধুর হাড়ি পেয়েছে। মধুর হাড়ির জন্যই অডিটররা মুখিয়ে থাকে। দুর্নীতিগ্রস্ত ডিআইএ দ্বারা অডিট কার্যক্রম পরিচালনা হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা শুধু সমালোচনার মুখোমুখিই হবে না দুর্নীতির দায়ভারও নিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ডিআইএ সংস্কার ছাড়া অডিট কার্যক্রম বন্ধ রাখাই শ্রেয়। স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত ডিআইএ গঠনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক,  প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিচারের আওতায় আনা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আদর্শ ও সুনাগরিক তৈরির কারখানায় পরিণত করতে পারলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে দেশ।

লেখক: শিক্ষক, দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029590129852295