শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকের ‘শপথবাক্য’ পাঠ করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, সমন্বয়করা কি স্টুডেন্ট না? সাস্টিয়ান হিসেবে লজ্জিত। কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ লিখেছেন, ‘স্বপ্নে দেখলাম, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সমন্বয়ক এথেন্সের এক বাজারে বসে সক্রেটিসরে শপথ পড়াচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মতবিনিময়ের এক পর্যায়ে শাবির সহসমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ারকে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করাতে দেখা যায়।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কড়া সমালোচনা করছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয়কদের এমন করা ঠিক হয়নি মন্তব্য করেছেন তারা। তবে সমালোচনার মুখে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ পরিবেশ হয়ে পড়ে শোকাবহ। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় হতাশা, চলমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের উচ্চাশা এবং নতুন প্রশাসন আসায় অতিমাত্রায় আপ্লুত হয়ে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধারণ করে শাবি তথা দেশের জন্য কাজ করার প্রত্যয়ে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাক্যগুলো সবার মুখে উচ্চারিত হয়েছে। এটি কোনো শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। ঘটনাটি যেভাবে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তা নয়।
এ ঘটনায় সমন্বয়কদের পক্ষ থেকেও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবি সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব ফেসবুকে লিখেছেন, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠান ছিল না। নতুন প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় ছিল। সেখানে শহীদদের আত্মত্যাগ ও জুলাইয়ের স্পিরিট ধরে রাখতে শিক্ষকদের কাছে কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিষয় উঠে আসে। যে ভিডিও সামনে এসেছে, এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ছিল। এ উদ্দেশ্য আরও সুন্দর ও যথাযথভাবে আমরা উপস্থাপন করতে না পারাই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
শপথ পাঠ করানো সহসমন্বয়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জুলাই বিপ্লবের কথা স্মরণ করে আমরা অনেকে বক্তব্য দিই। এরই ফলে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধরে রাখতে স্যারদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে অনুরোধ করি। স্যাররা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, তাদের অসম্মান হোক– এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা স্যারদের কাছে অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবেও আমি স্যারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।