প্রয়োজন সম্পর্কে প্রায় সকলেরই জানা একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হচ্ছে- ‘Necessity knows no law.’ তৈরি সম্পর্কে একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে-‘Laws are made for people’s needs.’ কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে মানুষের প্রয়োজনে আইন হয় না। বরং আইনের বেড়াজালে মানুষ আটকে যায়। বৃটিশরা আমাদেরকে শাসন এবং শোষণ করার জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করেছিলো। বৃটিশদের তাড়ানোর জন্য এ উপমহাদেশের বিখ্যাত কিছু মহামানব জীবন দিয়েছেন। অথচ সেই বৃটিশদের তৈরি করা আইন দিয়ে আজও আমরা চলছি। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি যে বাংলা ভাষার জন্য এদেশের মানুষ জীবন বিসর্জন দিয়েছিলো আজও সেদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয় শুধুমাত্র ইংরেজিতে, বাংলা ভাষায় রায় হয় না। কোনোদিনও কেউ এই কথা বলার প্রয়োজন মনে করলেন না যে-আদালতের রায় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও দেয়া হোক।
আসল কথায় আসি, শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র খবরের কাগজ ‘আমাদের বার্তা’ এবং ‘দৈনিক শিক্ষাডটকম’ ছাড়াও ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে চোখ পড়লেই দেখি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আহাজারি। তারা বদলি চান। প্রকৃতপক্ষে এই বদলি দূরদূরান্তে কর্মরত সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের একান্ত প্রয়োজন। সব শিক্ষকের আর্থিক সামর্থ্য সমান নয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত। যাদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষকই খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করছেন। বলতে গেলে ‘Hand to mouth’ এর চেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।
আর্থিকভাবে কষ্টের পাশাপাশি অনেকেই পরিবার ছেড়ে একা কয়েক শ বা হাজার কিলোমিটার দূরে চাকরি করে মানসিক কষ্ট ভোগ করছেন। অনেক শিক্ষিকা আছেন যারা বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চাকরি করছেন। দূরে একা চাকরি করার কারণে তারা বিভিন্নভাবে ইভটিজিং, সমালোচনা এবং সামাজিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। স্বল্প বেতনে চাকরি, দূরত্ব এবং অতিরিক্ত বাস ভাড়ার কারণে শিক্ষক কর্মচারীরা সহজে বাড়িও যেতে পারেন না। আত্মীয় স্বজনরা মারা গেলে তাদের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। অনেকেই স্বল্প বেতনে ভালো বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন না। কিন্তু স্বল্প বেতনের চাকরি হলেও শিক্ষকদের আবার সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে চলতে হয়। সুতরাং দূরে চাকরিরত শিক্ষক-কর্মচারীরা না পারছেন চাকরি ছাড়তে, আর না পারছে স্বাচ্ছন্দ্যে চাকরি করতে। They are always in dilemma. তারা সবসময়ই উভয় সংকট ও দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকেন।
বদলি সম্পর্কিত গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারির কর্মশালায় শুধুমাত্র এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বদলির ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। কমিটির মাধ্যমে দূরদূরান্তে নিয়োগ পাওয়া কর্মরত শিক্ষকদের কি বদলির প্রয়োজন নেই?
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বারবার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সম্মানিত শিক্ষকেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। যেমন-নিয়োগের পর যোগদান থেকে বেতন না পাওয়া, বকেয়ার জন্য আলাদাভাবে আবেদন, ১০ শতাংশ কাটা চাকরি শেষে নিজের বেতন থেকে কেটে নেয়া, টাকা পেতে ঘুষ এবং দীর্ঘ অপেক্ষা, এমপিওভুক্ত হতে হয়রানি ও ঘুষের সুযোগ তৈরি করে রাখা, উচ্চতর স্কেল পেতে এমপিওভুক্তির সময় থেকে দশ বছর নাকি বিএড স্কেল থেকে দশ বছর এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা রাখা, বছরের পর বছর নারী কোটা পূরণ না হওয়ার পরেও ওই পদ পুরুষ প্রার্থী দিয়ে পূরণ না করে শিক্ষক ঘাটতি সৃষ্টি করে রাখা, পাঠদানের অনুমতি এবং একডেমিক স্বীকৃতি দেয়ার পরেও ২০-২৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না করে নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন হতাশায় রাখা। এ ছাড়া হাজারো সমস্যায় জর্জরিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যা সবারই জানা। সুতরাং, উল্লেখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে আরো বিচক্ষণ হওয়া, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হওয়া এবং সর্বোপরি কল্যাণকামী হওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
সবশেষে এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং এনটিআরসিএ’র সনদের ভিত্তিতে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এবং প্রয়োজনের তাগিদে এনটিআরসিএ’র সনদবিহীন অন্যান্য সকল ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের দূরত্ব, বয়োজ্যেষ্ঠতা এবং মেধার ভিত্তিতে বদলি বাস্তবায়ন করার জোরালো দাবি জানাচ্ছি এবং প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এবং কর্মচারীদেরও বদলির আওতায় আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ রইলো।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।