নাটোরের মহারাজা জেএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম করে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জনবল কাঠামোর বাইরে দুইগুণ বেশি জনবল নিয়োগ দিয়ে এমপিও করা, অতিরিক্ত সময়ে কাজের অজুহাতে প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছেন তিনি। বিএসসি পাশ করে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে নিজেকে পরিচয় দেন অধ্যক্ষ হিসাবে। বৃহস্পতিবার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। রোববার নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুব দ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নাটোর মহারাজা জগদিন্দ্র নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শাখার কার্যক্রম শুরু করা হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পাঠদানের অনুমতি এবং একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর কলেজ শাখার ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর প্রত্যাশায় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
এসব শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময় প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আব্দুল মজিদ। পরবর্তীতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান বর্তমান প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ শাখা এমপিওভুক্ত হলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর তালিকা অবৈধভাবে রদবদল করেন। গণিতের প্রভাষক পদে সাত বছর করে পাঠদানকারী আব্দুল মান্নান এবং ইংরেজির প্রভাষক ওমর ফারুককে বিদায় করে ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে গণিতের প্রভাষক পদে আশরাফুল ইসলাম এবং ইংরেজির প্রভাষক পদে সুনাম চন্দ্রকে নিয়োগ দেন। ২০১৫ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির জনবল প্রতিবেদনে এ দুই শিক্ষকের নাম রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ এ প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও ওই দুই শিক্ষকের নাম আছে। নতুন দুই শিক্ষককে নিয়োগ দানের জন্য ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগের সব কাগজপত্রে বেআইনিভাবে ঘষামাজা করে নাম পরিবর্তন করা হয়। নিয়োগকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি সভার নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে দুজনের নাম বাদ দিয়ে নতুন দুজনের নাম সংযোজনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কলেজ এমপিওর আগে আমার কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসে, আমি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। একই কথা বলেছেন নিয়োগকালীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজি) প্রতিনিধি এবং তৎকালীন নাটোর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দিলীপ কুমার ভদ্র।
কলেজ শাখা এমপিও ঘোষণার পর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া নেতা ও নাটোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদুর রহমান জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে কোটি টাকার ওপরে উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রভাষক জানান, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ নিয়োগের পরে সাত বছরের অধিক সময় ধরে কলেজে বিনা পয়সায় নিয়মিত শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে গেছি। আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। চাকরির বয়স চলে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে এ বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে চাকরি রক্ষা করেছি। রোববার বারবার চেষ্টা করলেও আত্মগোপনে থাকায় প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জাহিদুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, দুজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে নতুন দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি কিছুই করেননি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সব করেছেন সভাপতি। অপরদিকে চারজনের স্থলে ১০ জন কর্মচারী নিয়োগ ও ৯ জনের এমপিওভুক্তি করার বিষয়ে বলেন, স্কুল ও কলেজ আলাদা প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে তিনি এটা করেছেন। একই প্রতিষ্ঠানকে আলাদা দেখিয়ে নিয়োগের সপক্ষে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।