দৈনিক শিক্ষাডটকম, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২২ জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আজ শুক্রবার। লিখিত পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং ইনভিজিলেটর বা কক্ষ পরিদর্শকদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের যোগসাজশ ঠেকাতে প্রথমবারের মতো লটারিতে কক্ষ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রপ্রধান সব শিক্ষকের নাম একত্র করে লটারির মাধ্যমে কক্ষ বরাদ্দ করবেন। লটারিতে নাম ওঠা শিক্ষক নির্দিষ্ট কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ না হলেও পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে একশ্রেণির কক্ষ পরিদর্শকের গোপন সমঝোতা হয়। তাঁরা নির্দিষ্ট কক্ষে দায়িত্ব নিয়ে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে টাকার বিনিময়ে উত্তর বলে দেন। এ বিষয়ে এখন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে ইনভিজিলেটরের চুক্তি হয়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পরীক্ষার ১৫-২০ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে কক্ষ পরিদর্শক জানতে পারবেন, তিনি কোন কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন। এতে করে কক্ষ পরিদর্শকদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের যোগসাজশ ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে করি।’
জয়পুরহাট জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অভিযান চালিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাঁদের মধ্যে কলেজের এক অধ্যক্ষও আছেন। গত বুধবার সকালে জেলার পাঁচবিবি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উঁচাই কলেজের অধ্যক্ষ রুস্তম আলী, বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল গ্রামের ইশান ইমতিয়াজ হৃদয় এবং কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হরিণগাছী গ্রামের রোকনুজ্জামান।
জানা গেছে, আজ ২২ জেলার ৬০৩টি পরীক্ষাকেন্দ্রের মোট ৯ হাজার ৩৫৭টি কক্ষে পরীক্ষা হবে। কক্ষের আকার অনুসারে কোথাও দুজন, আবার কোথাও চারজন কক্ষ পরিদর্শক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সকাল ১০টায় ৬০৩টি কেন্দ্রে একযোগে এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। ৩ হাজার ৭৭২টি পদের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ জন প্রার্থী। প্রতি পদের জন্য লড়ছেন ১১৭ জন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকেরা নিজ নিজ জেলার সব পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন জেলায় মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলায় পৌঁছে গেছেন।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে জয়পুরহাটে একটি চক্র প্রতারণার উদ্দেশ্যে তৎপরতা শুরু করে। চক্রের সদস্যরা ২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে লক্ষ্য করে ২০-২৫ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিবদ্ধ হওয়া সেসব প্রার্থীকে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও দিয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সে খবর পায় ডিবি। এর পরপরই পাঁচবিবি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালিয়াত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।