দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর : রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ অর্থ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রিসোর্স সেন্টারের প্রশিক্ষকসহ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি শিক্ষকদের। এ বিষয়ে রংপুরের প্রাথমিক শিক্ষার উপপরিচালক ও রংপুর পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তাঁরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের পাঠদানের জন্য সারা দেশে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় গত বছর। এর আওতায় গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৯৩ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পান। তাঁদের প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের জ্ঞান, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশ, নৈতিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানে পারদর্শী করতে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
নীতিমালায় প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া শিক্ষকদের আপ্যায়ন, বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ ও অন্যান্য ব্যয় হিসেবে ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মানসম্মত খাবার ও উপকরণ সরবরাহ করা হয়নি বলে দাবি করেন শিক্ষকেরা। রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর সুফিয়া পারভীনসহ অন্যরা বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। এই শিক্ষকেরা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের শাস্তির দাবি তুলে রংপুরের প্রাথমিক শিক্ষার উপপরিচালক ও রংপুর পিটিআই সুপারিনটেনডেন্টসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী রেজাউল করিম রনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিন প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে ৫০০ টাকা, খাবার বাবদ ২৮০ টাকা ও ব্যাগের জন্য ৫০০ টাকাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ উপকরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও এগুলো সরবরাহ করা হয়নি। প্রশিক্ষণ শেষে আমদের প্রত্যেককে ভাতা হিসেবে ১৩ হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্টাম্পে ১৩ হাজার ২০০ টাকার স্বাক্ষর নিলেও দিয়েছে ১০ হাজার ২৭০ টাকা। এ বিষয়ে রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর সুফিয়া পারভীন স্যারের কাছে দাবি তুললে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তাই বাধ্য হয়ে ঊর্ধ্বতন স্যারদের কাছে লিখিত অভিযোগ করি।’
নুরাইষা আক্তার নামে এক শিক্ষিকা বলেন, ‘এখানকার স্যার-ম্যাডামদের বারবার বলেছিলাম আমাদের টাকা দিয়ে দেন। তারা বলেন, এগুলো এভাবেই চলে। উল্টো আমাদের পাওয়া টাকা থেকে আরো ১৪৬ টাকা করে দাবি করেন।’
উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর সুফিয়া পারভীনের এ বিষয়ে কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে আর কিছুই বলার নাই। ওরা ওদের প্রাপ্য যা টাকা চাইছে আমি সব সময়েই দিতে রাজি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম চাঁদ বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়ে দেখলাম খাতা, কলম ফাইলসহ অন্যান্য সামগ্রীতে অনিয়ম হয়েছে। আমি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলছি, যা হয়েছে এরপর যেন আর এমন ধরনের ঘটনা না ঘটে।’
এ বিষয় রংপুরের পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউল হক বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি আমার কর্মকর্তার কাছে জবাব চেয়েছি। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’