দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের অভিযোগ করেছে ১৭ জন ছাত্রী। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে ছাত্রীদের বক্তব্য উঠে আসে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অপর দুই সদস্য হলেন—শিক্ষক ড. ফারহানা খানম ও শামসুন আরা সুলতানা। এই কমিটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিমপুর দিবা শাখা থেকে পাশ করে কলেজে আসা ৭২ ছাত্রী ও সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির দিবা শাখার ১৭৭ জন ছাত্রীর কাছ থেকে শিক্ষক মুরাদের সম্পর্কে লিখিত মতামত নেওয়া হয়। এতে ১৭ জন শিক্ষার্থী নেতিবাচক মতামত দিয়েছে।
১৭ ছাত্রীর বক্তব্য
তদন্ত প্রতিবেদনে একাদশ শ্রেণির দুই জন ছাত্রীর বক্তব্যে বলা হয়, ‘তার (শিক্ষক মুরাদ) কাছে যারা কোচিংয়ে পড়ে, তাদের প্রতি তিনি অতিরিক্ত পরিমাণ স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করেন। তার ব্যবহারে (আচরণগত) সমস্যা আছে বলে অনেকের কাছে শুনেছি। স্যারের কোচিংয়ে এক জুনিয়রের (ছাত্রী) সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ ঘটেছে।’
অন্য একজন ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, ‘‘মজা করতে করতে পাঠদান করেন। কিন্তু তার প্রাইভেটে পড়াকালীন তিনি আমার দুজন বন্ধুর সঙ্গে এবং আমার একজন জুনিয়র ছাত্রীর সঙ্গে বাজে অঙ্গভঙ্গি করেছেন। প্রাইভেট পড়ার সময় শরীর ও চুলে হাত দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খাতার মধ্যে ‘ভালোবাসি’সহ অনেক ধরনের কথা লিখতেন। তাছাড়া তিনি আরেক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন। তিনি স্কুলে এত না করলেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় এসব করতেন।’’
তদন্ত কমিটির কাছে আরেক ছাত্রী বলেছে, আমার সঙ্গে কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ হয়নি। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কোচিং করেছে, তারা বলেছে যে সে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। অপর এক ছাত্রী বলে, যারা স্যারের কোচিং করতো, তাদের সঙ্গে একটু বেশিই ইন্টিমেট ছিলেন।
অন্য এক ছাত্রী কমিটিকে বলেছে, স্যার কখনও আমার সঙ্গে কোনও বাজে আচরণ করেননি। তবে আমাদের জুনিয়র কিছু ছাত্রী কমপ্লেইন করেছে। তাদের মতে, স্যার অনেক টাচি ব্যবহার করেন। আমার আপন ছোট বোনও একই কথা বলেছিল আমাকে।
একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, আমার এক বান্ধবীকে একজন জুনিয়র ছাত্রী বলেছে, স্যার ওকে অশালীন কিছু বলেছে, আমি এরকমটি শুনেছিলাম।
স্কুল শাখার এক ছাত্রী বলেছে, ‘আমি কখনও স্যারের কাছে কোচিং করিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে দশম শ্রেণির আপুদের কাছ থেকে স্যারের নামে অভিযোগ শুনেছিলাম। বেশ কয়েকজন আপু নাকি স্যারের কাছ থেকে ব্যাড (খারাপ) টাচের শিকার হয়েছেন।’
মাধ্যমিক শাখার তিন ছাত্রী বলেছে, ‘এক ছাত্রী তাদের জানায়, তাকে রাতে ফোন দিয়ে কথা বলবে বলে জানান তিনি (শিক্ষক মুরাদ)।’
মাধ্যমিকের অপর এক ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, ‘স্যার খুবই পক্ষপাতিত্ব করেন। তিনি তার পূর্ব পরিচিত ছাত্রীদের অনেক স্পেশাল মনে করেন। তিনি সবসময় তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তার প্রিয় ছাত্রীদের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে যান, মাঝে মাঝে। তিনি তার প্রিয় ছাত্রীদের স্পর্শও করে থাকেন।’
মাধ্যমিকের অপর এক ছাত্রী বলেছে, ‘স্যার পড়া বোঝান ভালো, স্যারের আচরণ বেশি ভালো না।’ আর তিন জন ছাত্রী বলেছে, ‘স্যার পড়ান ভালো, কিন্তু স্যারের অঙ্গভঙ্গি ভালো না।’
অপর এক ছাত্রী বলেছে, ‘স্যার গণিত ভালো বোঝান, অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলা যায়। স্যার কোচিংয়ে আমাদের মজা করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছেন, তারপর হেসে বলেছেন, না মজা করছিলাম।’
অন্য এক ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, ‘মোটামুটি ভালো বোঝালেও তার আচার-আচরণ আমার কাছে ভালো লাগেনি।’ আরেক জন বলেছে, ‘স্যার আমার সঙ্গে একটু কেমন যেন আচরণ করেন। তিনি একবার আমাকে চোখ টিপ মেরেছিলেন।’