শিক্ষক হতে অসদুপায় কেনো - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক হতে অসদুপায় কেনো

মো. আজহারুল ইসলাম |

বেশ কয়েকটি বিভাগে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা প্রশাসনের দৃঢ় সংকল্প ও ব্যবস্থাপনায় খুবই স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে শেষ হলো। এরই মধ্য থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধাপগুলো পেরিয়ে মেধার সার্বিক মূল্যায়নে লক্ষাধিক প্রার্থীর মধ্য থেকে কয়েক হাজার প্রার্থী হয়তো নিয়োগ পেয়ে যাবেন এবং শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার প্রত্যয়ে দেশ ও জাতি গড়ার মহান দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন।

এই চাওয়াই আমাদের সকলের। তবে একটা বিষয়ে আলোকপাত করা যেতেই পারে এবং তা হলো, যারা শিক্ষক হতে চান অথবা শিক্ষকতার মতো মহান পেশা বেছে নিতে চান, তাদের নিয়োগ পরীক্ষায় আসার আগে থেকেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিয়েই জাতি গঠনের এই পেশায় আসা উচিত। সেক্ষেত্রে শিক্ষকতা পেশা সেটা প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের যেকোনো স্তরের হোক না কেনো শিক্ষক নামের মহান পেশাটিতে আসার আগে নিজের যদি কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকে সব ত্যাগ করে তবেই এ পেশায় আসা উচিত। অবশ্যই এই পরিশুদ্ধতা সবক্ষেত্রেই দরকার। কারণ, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীর আশ্রয় কোনো জায়গায়ই নেই যদিও সমাজ দেশ রাষ্ট্র এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো কূলকিনারা খুজে পায় কি না সেটা সমাজবিজ্ঞানী অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই ভালো বলতে পারবেন। বরং দেখা যাক এবারে প্রথম ধাপে যে কয়েকটি বিভাগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে গেলো সেদিকে। 

প্রশাসনের কঠোর নিয়ম ও ব্যবস্থাপনায় এতো স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা সত্বেও অসাধু অর্থলোভী কিছু শিক্ষক অভিভাবক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রনেতা যুবনেতাসহ বিভিন্ন পেশার কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি এমনকি শিক্ষক হতে চাওয়া কিছু স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার চেষ্টা করে অথবা নিয়োগ প্রার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতা করে। বাস্তবতা যা দেখা গেলো এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি বা শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কুলাঙ্গার দূর্নীতিবাজ অর্থলোলুপদের দৌরাত্ম্য কমেনি যদিও প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারির কারণে হয়তো অনেকেরই সেই অপরাধমূলক অবৈধ কর্মকাণ্ড সফল হয়নি। এবারের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হওয়ামাত্রই সামাজিক মাধ্যমে ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকার খবরা-খবরে জানা গেলো কয়েকটি জেলায় শিক্ষক জাতির কলঙ্ক নামধারী কতিপয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার অসাধু ব্যক্তি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কতিপয় প্রার্থীকে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করতে গিয়ে অথবা অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য করতে গিয়ে ওরকম জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে আইনের জালে আটকা পড়েছে।

এক্ষেত্রে প্রথমেই যেসকল কতিপয় অর্থলোভী অসাধু শিক্ষক যারা এবারের মতো প্রতিবারেই অবৈধ আয়ের উৎস হিসেবে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য করতে নিজেকে জড়িয়েছেন বা জড়াচ্ছেন তারা কি এতোই বিবেক বর্জিত! তাদের কি নিজের পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ এবং দেশের প্রতি নূন্যতম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ নেই! এ ধরনের অসৎ, দুর্নীতিবাজ শিক্ষক দেশ ও জাতির নীরব ঘাতক বললেও কম বলা হবে। কারণ, এরা শিক্ষক হয়ে শিক্ষা নামক যন্ত্রের ভালো ব্যবহার না করে এর অপব্যবহার করে জাতির মেরুদণ্ড গড়ার পরিবর্তে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে লিপ্ত। 

তাই শিক্ষার যেকোনো স্তরেই কেউ শিক্ষক হিসেবে প্রবেশ করতে চাইলে ভালো পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, সর্বোপরি দেশের প্রতি ভালোবাসা মনেপ্রাণে জাগিয়ে তুলে তবেই এ মহান পেশায় আসা উচিত। অবশ্যই শিক্ষার সব স্তরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে মেধাবীদের আগমন ঘটবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সেক্ষেত্রে এনটিআরসি কর্তৃক মাধ্যমিক, কলেজ, মাদরাসা পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশংসার দাবীদার।

তবে এসব পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো দুর্নীতি ও অবৈধ উপায় থেকে রেহাই পায়নি। এক্ষেত্রে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তর, বিভাগ ভবিষ্যতে স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একদিকে যেমন সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষার সকল স্তরেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আসার সুযোগ দেয়া সম্ভব হতে পারে তেমনি অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনাও দুর্নীতিমুক্ত হতে পারে। কারণ, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান যখন ঘুষ-দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তখন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ফসল আশা করাও বোকামি অথবা সেখানে সাধারণ শিক্ষকদেরও দুর্নীতির ঘ্রাণ থেকে মুক্ত থাকা দায় এ কথা বললেও অত্যুক্তি হবে না। তাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। 

আর এভাবেই শিক্ষার সর্বস্তরেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ বিরাজ করলে ভবিষ্যতে কেউ আর অসদুপায় অবলম্বন অথবা অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকতে পারে এই আশা করা যেতেই পারে। সবশেষে আরো আশা করা যেতে পারে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা শিক্ষার সকল স্তরে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে সকল ক্ষেত্রেই এর সুফল দেখতে পাওয়া যাবে, দেশ ও জাতির কল্যাণে শিক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। 

লেখক:  সিনিয়র শিক্ষক, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট পঞ্চগড়

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054378509521484