বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহপ্রধান এবং কর্মচারী পদে নিয়োগের কমিটিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ও অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউটে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগে করণীয় নির্ধারণের সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় অংশ নেয়া শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ওই সভায় অংশ নেয়া একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষকসহ প্রশাসনিক পদ ও কর্মচারী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া মানসম্মত করতে স্থানীয় পর্যায়ের নিয়োগ কমিটিকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণে পদে থাকা অপর এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নিয়োগ কমিটিতে অংশিজনদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। তবে প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে কারা কারা যুক্ত হবেন সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সভায় শিক্ষা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) হাতে থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগ হয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির তদারকিতে স্থানীয় পর্যায়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে। এ কমিটিতে প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ ও হাইস্কুলের একজন প্রতিনিধি থাকেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা ওই পদে দায়িত্বরত শিক্ষক এ নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ বিস্তর। প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগকে কেন্দ্র করে সংর্ঘষ, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সাড়ে ৩ লাখ থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে দিতে হয়। এ টাকা দিতে হয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পরিচালনা কমিটিকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় এসব পদে নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে।
তাই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢেলে সাজাতে চাচ্ছে সরকার। প্রশ্নাতীত উপায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সুপার ও সহকারী সুপার নিয়োগের পথ খুঁজতে দফায় দফায় সভা করছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা।
কয়েকজন সংসদ সদস্যের বাধায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে দেয়া যায়নি। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে শুধু এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। তারপর থেকেই প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগও এনটিআরসিএর হাতে দেয়ার দাবি জোরালো হয়ে উঠতে উঠতে এখন তুঙ্গে। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও শিক্ষকরা চাচ্ছেন, এসব নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমেই হোক।
জানা গেছে, এর আগে গত ২ অক্টোবর মানসম্মত প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে সভা হয়েছিলো। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে ওই সভায় বেশিরভাগ কর্মকর্তাই এসব নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমে চালানোর পক্ষে মত দেন। ওই সভা শেষে কর্মকর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, এনটিআরসিএকে অধ্যক্ষ-প্রধান-সহকারী প্রধান নিয়োগের দায়িত্ব দিতে আইন সংশোধন করতে হবে। এনটিআরসিএ আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন কর্তারা। যদিও নানা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করেই শেষ হওয়া ওই সভায় চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নিয়োগের এই বাড়তি দায়িত্ব পালনে এনটিআরসিএ কতোটা সক্ষম জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়িয়ে এসব পদে নিয়োগের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দিতে হবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।