শিক্ষার্থীদের অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।
সারজিস বলেন, ‘ছাত্রসমাজ এই সংকটের সময় যা করেছে, তার জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। ছাত্রসমাজ রাস্তায় থাকা কখনোই একটি দেশের স্থিতিশীলতার পরিচয় না। ইভেন পুলিশের যেখানে দায়িত্ব পালন করার কথা, ট্রাফিকের কথা যদি বলি, সেখানে না থাকাও স্থিতিশীলতার পরিচয় না। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য যার যেখানে দায়িত্ব সেখানে ফিরে যাওয়া উচিত।
আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘পুলিশ দায়িত্বে ফিরছে। সেক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের প্রতি আমাদের আহ্বান, যেখানে যখন ট্র্যাফিক বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টিম আসবে, সেখানে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ছাত্র সমাজকে সরে যেতে হবে। আপনাদের অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে, ক্লাসে ফিরে যেতে হবে এবং পড়ার টেবিলে ফিরতে হবে।’
বৃহস্পতিবার শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে আসাদের ওপর হামলা ও হেনস্তা করার ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি। সারজিস বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি ধানমন্ডি ৩২ সহ বিভিন্ন স্থানে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হয়েছে যা আমাদের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সাথে যায় না। আমরা বিভিন্ন ভাইরাল ভিডিও দেখেছি, বাবার বয়সী একজন মানুষকে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে এবং মানুষ যা ইচ্ছা তাই বলছে। অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে। মায়ের বয়সী একজনের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার ঘটনাও আমরা দেখেছি।’
সারজিস আলম বলেন, ‘গতকাল আমরা যা দেখেছি তাতে স্টুডেন্টদেরও কিছু পার্টিসিপেশন ছিল। আমরা জানিনা তারা আসলে কোন মতাদর্শ ধারণ করে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সবাই এক সাথে বসে কথা বলেছি, আমরা স্পষ্ট বলি, আমরা খুঁজছি, এগুলোর সাথে আমাদের কোনো সমন্বয়ক বা সহ সমন্বয়ক আছে কিনা। আমরা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যদি সিঙ্গেল একজনকেও পাই সমন্বয়ক বা সহ সমন্বয়ক যুক্ত এটার সাথে, আমরা তাকে বহিষ্কার করব।’
এই সমন্বয়ক আরও বলেন, ‘অতিরঞ্জিত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত যদি কাউকে আমরা পাই, এবং ভবিষ্যতেও যদি এমন কোনো ঘটনা হয় তাহলে এই রিলেটেড সকলকে, কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারা যেটা করেছে একজনকে বিবস্ত্র করা থেকে শুরু করে গায়ে হাত তোলা এগুলো কোনো দিন আইন সংগত নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত যা কিছু করা প্রয়োজন একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে আমরা করব। আমাদের দুজন যেহতু অন্তর্বর্তী সরকারে আছে, তাদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায় আমরা করব।’
কেউ শোক পালন করতে চাইলে বাধা দেয়া যাবে না জানিয়ে সারজিস বলেন, ‘আরেকটি অবস্থান, দেশে বিভিন্ন আদর্শের দল থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ যা করেছিল তার ফল তারা ভোগ করবে। কিন্তু সেই কাজ যদি, কেউ যদি নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেটি আমরা কখনও মেনে নেবো না। এটার জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, ১৫ আগস্টে যদি কেউ তার অবস্থান থেকে শোক পালন করতে চায়, ফুল দিতে চায়, আমাদের জায়গা থেকে আমরা কখনও তাদের বাধা দিতে পারিনা। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে দাঁড়িয়েও আপনি যদি আপনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চান, আমরা এটাকে সমর্থন করিনা।’
সারাদেশে অনেক ভুয়া সমন্বয়ক তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধীর নাম ভাঙিয়ে আমরা যারা সমন্বয়ক, সহ–সমন্বয়ক, আমরা কোথাও অথরিটি খাটাতে যাই নি। আমরা বলেছি, ন্যায্য জিনিসই যেন বাস্তবায়ন হয়। এখন ভুয়া অনেক সমন্বয়ক তৈরি হয়েছে। আমরা কোনো অথরিটি নই, আমরা একটি প্রেসার গ্রুপ। আমরা বলতে পারি দুর্নীতি হচ্ছে, দুর্নীতিবাজকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমরা কাউকে সরিয়ে দিতে পারি না।’
সারজিস বলেন, ‘আমরা দেখছি অনেককেই পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, আমরা এটা করতে পারি না। এখন অসংখ্য ভুয়া সমন্বয়ক তৈরি হচ্ছে, তারা বিভিন্ন কাজ করছে। আমরা মনে করি, হয় তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে এটা করছে, লুটপাট বা অর্থ আত্মসাতের জন্য করছে বা তা্দের রাজনৈতিক কোনো স্বার্থ থাকতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কখনোই এমন কিছু প্রোমোট করে না যে কেউ একটি হোস্টেলে গিয়ে সার্চ করবে। কেউ আবাসিক হোটেলে যাবে, কেউ একজন অধ্যাপককে জোর করে নামিয়ে দেবে। আমরা দাবি জানাতে পারি, অথরিটি সিদ্ধান্ত নেবে তারা এটি করবে কিনা। সেটাও তদন্তের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।’