বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, মানুষের কল্পনা শক্তি বাড়িয়ে রাখার উপায় হচ্ছে বেশি বেশি বই পড়া। বই পড়লে ব্রেইনের ব্যবহার হয়। বই পড়লে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব শিক্ষকদের।
কোনো শিক্ষার্থীর চিন্তা, চেতনা, মেধা, মনন কেমন তা মা-বাবার চেয়ে শিক্ষকরাই বেশি জানেন। তাই একজন শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে হলে শিক্ষকদেরকে আরও যত্মবান, আন্তরিক ও দায়িত্ববান হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একনিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম।
শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের আয়োজনে বই মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাফর ইকবাল বলেন, আনন্দময় পড়াশোনার জন্য ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পদ্ধতি চালু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে আরও বাড়াতে হবে। ২০৪১ সালে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকেও শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ। সে সময়ে সেখান থেকে বাংলাদেশে শিক্ষার জন্য ছুটে আসতে হবে।
তিনি বলেন, জীবনে প্রথম রক্ত দিয়েছি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে। যেদিন প্রথম রক্ত দিয়েছিলাম সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। পরে যখন দেখলাম আমার কিছুই হয়নি এবং জানতে পারলাম আমার রক্ত টাঙ্গাইলে গিয়েছে। পরবর্তীতে টাঙ্গাইলে গিয়ে বুঝতে পারলাম এই রক্ত দিয়ে মানুষের জন্য কিছু করলে ভালো লাগে। ১৮ বছর বয়সের পর সকলকে কিছু দিন পর পর মানুষের জন্য রক্ত দেওয়ার আহ্বান জানান।
কেন্দুয়ার কৃতী সন্তান জাফর ইকবাল বলেন, এতদিন কেন্দুয়ায় সময় কম দিতে পেরে অনেক ভুল করেছি। কেন্দুয়ার মাটির আলাদা একটা গুণ আছে। এখন থেকে সময় পেলেই কেন্দুয়ায় ছুটে আসব।
হুমায়ূন আহমেদের কথা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, তিনি ছিলেন বহুবিদ প্রতিভার অধিকারী। তার তুলনা তিনি নিজেই। তার সঙ্গে আমার কোনো তুলনা করবেন না। আমি হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই। এটিই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আসাদুল করিম মামুন ও সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভূঞার সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল্লাহ আল মুনসুর, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন, ওসি মো. আলী হোসেন ও লোক সাহিত্য সংগ্রাহক ছড়াকার জাহাঙ্গীর আলম জাহান।
এই মঞ্চে মো. নুরুল ইসলাম রচিত রাশেদের প্রেম ও রাজনীতি উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন করেন জাফর ইকবাল।
এর আগে দুপুরে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবে সুধী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জাফর ইকবাল। এ সময় বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম, সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, পালা নাট্যকার রাখাল বিশ্বাস, কবি আয়েস উদ্দিন ভূঞা, কবি ও ছড়াকার জিয়াউর রহমান জীবন, আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান ভূঞা, রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আসাদুল করিম মুমুন ও সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভূঞা।
সভায় কেন্দুয়া উপজেলা সদরে হুমায়ুন আহম্মেদ লোক সংস্কৃতি একাডেমি স্থাপনে জোর দাবি জানানো হয়। বিকেলে পালাগান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট লোক সংগীত শিল্পী আব্দুল কুদ্দুছ বয়াতি।