অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এবং তদবিরে এমপিওভুক্ত হওয়া দেশের বহু স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় কাম্য শিক্ষার্থী নেই বা ধরে রাখতে পারেনি। দেখা গেছে, বিগত তিন দশকে শিক্ষার্থী সংখ্যায় ভুল তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্ত হলেও পরে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে। কিন্তু সরকারি কোষাগার থেকে মান্থলি পে অর্ডার বা এমপিও বাবদ প্রতিমাসে বেতন-ভাতা ঠিকই তুলছেন কম শিক্ষার্থী থাকা স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। দশকের পর দশক ধরে এটা চলে আসছে। এবার এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করার উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে সমন্বয় করিয়ে দেয়া হবে।
গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এমন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কম শিক্ষার্থী থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরকে। সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর। সভা সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সভাসূত্র জানায়, কাঙ্ক্ষিত ছাত্র নেই কিন্তু এমপিও আছে এমন স্কুলগুলো চিহ্নিত করতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরকে (ডিআইএ) বলেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব। তিনি বলেছেন, প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিও বাতিল করে দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়া হবে। ডিআইকে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জারি করা স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালা অনুসারে প্রতি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা হতে হবে ৪০ জন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার প্রতি বিভাগে নূন্যতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর একক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৪০ জন। উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বিভাগের ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী হতে হবে ৪০ জন। এমপিও পেতে দুই বর্ষ মিলিয়ে শহরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬০ জন ও মফস্বলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।
শহরের উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে নূন্যতম কাম্য শিক্ষার্থী ৪০ জন ও বিজ্ঞান বিভাগের জন্য নূন্যতম ৩৫ জন। মফস্বলের উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খোলার জন্য নূন্যতম ৩০ জন ও বিজ্ঞান বিভাগ খোলার জন্য নূন্যতম ২০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর এমপিও পেতে শহরের স্নাতক কলেজে তিন বর্ষ মিলিয়ে ৭৫ জন ও মফস্বলের স্নাতক কলেজে ৬০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে।
দেশের নিম্ন মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। পরে আবেদন অনুযায়ী সরকার এগুলোকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করে আসছে। এমপিওভুক্ত হলে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার বড় অংশই পাওয়া যায়।