শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব

ননী গোপাল সূত্রধর |

শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। জনগণের এই অধিকার নিশ্চিত করতে যেকোনো স্বাধীন রাষ্ট্র বা সরকারের আবশ্যকীয় গুরু দায়িত্ব। শিক্ষা ছাড়া উন্নতি দূরের কথা কোনো জাতি সভ্য হয়েছে এমন নজির হয়তো সভ্যতার ইতিহাসে বিরল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উন্নয়ন মানে শিক্ষার উন্নয়ন তথা দেশ ও জাতির সামষ্টিক উন্নয়ন। সুতরাং শিক্ষা বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা ধরনের নীতিমালা, শিক্ষা কমিশন, শিক্ষা আইন অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত আইনে কোথাও শিক্ষকদের চাকরির মান মর্যাদার বা আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করে মেধাবী স্নাতক ডিগ্রিধারীদের শিক্ষকতা পেশায় উৎসাহিত করা হয়নি। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পেশার সূচকের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখি যে, শিক্ষকতা একটা মহান পেশা, যেখানে যেমন রয়েছে সম্মান ও মর্যাদা তেমনি রয়েছে আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা। সেখানে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষাবান্ধব ও সভ্যতার অভিভাবক। 

শিক্ষকতা এমন একটি পেশা বা ব্রত যা সকল পেশার পেশাজীবীদের হাতে কড়ি দিয়ে থাকে। আর আমাদের উন্নয়নশীল বাংলাদেশের চিত্র উল্টো। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এতোটা বৈচিত্র্যময় এবং প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেবে এতোটাই বৈষম্যমূলক যে আমরা ভূলে যায় মনে রাখতে পারি না কোথায় কী হচ্ছে কীভাবে হচ্ছে কার কী হচ্ছে? ইদানীং কর্তা ব্যাক্তিদের আচার-আচরণ কথা বার্তায় সুস্পষ্টভাবে এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আরেকটা মজার ব্যাপার কি জানেন, যিনি শিক্ষকের ওপর ক্ষমতা বা কর্তৃত্ত্ব খাটান তিনিও কোনো না কোনো শিক্ষকেরই গুণধর ছাত্র যাকে নিঃস্বার্থভাবে ওই শিক্ষকের সমস্ত মেধা জ্ঞান উজাড় করে দিয়ে ওই কর্তাব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষের  চেয়ারে বসিয়েছেন। হায় সেলুকাস! এ ছাড়া, যত্রতত্র শিক্ষকরা লাঞ্চিত অপমানিত ব্যাপক বঞ্চিত হচ্ছেন-যা সংবাদপত্রগুলোই দালিলিক প্রমাণ বহন করছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে।

যাইহোক, সাম্প্রতিক কালে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ বা সরকারিকরণের দাবিতে সারা বাংলাদেশের শিক্ষকরা ঢাকায় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন করছেন! এই আন্দোলন আজকে কেনো হচ্ছে রাষ্ট্র কি তার খবর রাখছে? শিক্ষা তো সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। তাহলে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সকল ব্যয়ভার রাষ্ট্র এর বহন করা অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ বা সরকারিকরণ করলে কি শুধুই শিক্ষকদের লাভ হবে?  এই প্রশ্নটির উত্তর সবার কাছেই আছে! 

আমি মনে করি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই দুটি গণ সেবামূলক খাতের উন্নয়ন করে আজকের রাষ্ট্রকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করা একান্ত সরকারেরই দায়িত্ব। তাই এই জাতীয়করণের দাবি কী শুধুই শিক্ষকদের না সকল জনগণ তথা রাষ্ট্র নিজেরই হওয়া উচিত নয় কি? 

আমার আরেকটা প্রশ্ন, এমপিওভুক্ত মাধ্যমিকের একজন এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষকের মাসিক বেতন ১২৫০০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিকের একজন প্রভাষকের বেতন ২২০০০ টাকা  থেকে ১০ শতাংশ কেটে মোট টাকার সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা বাবদ ১৫০০ টাকা যুক্ত করে যা আসে তা দিয়ে কি একজন শিক্ষক আসলেই চলতে পারেন? এই 'না' উত্তরটিও সবার জানা।

কথায় আছে যার মাথা তার ব্যথা। এবার বলেন, রাষ্ট্রকে এই ব্যাপারে জাগাতে হলে শিক্ষকদের রাজপথে না নেমে উপায় কী? আর রাষ্ট্র যদি এইভাবে ঘুমিয়ে থাকে তাহলে শিক্ষকদের সাগরে ঝাঁপ দেয়া ছাড়া আর কি কোন উপায় আছে? এখনই সময় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারিকরণ করা।
পরিশেষে, শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ডই হয় তাহলে শিক্ষকরা হচ্ছেন সেই মেরুদণ্ডের নির্মাতা।  আর সেই নির্মাতাদের বা ত্রাতাদের সঙ্গে নির্মম আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং যার পরিণতি অতি ভয়ংকর। যেমনটির শিক্ষা আমরা ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ গল্পে পাই। এক সময় শুনতাম,  শিক্ষকতা পেশা নয়, ব্রত। শিক্ষকরা জাতির বিবেক। এইগুলা এখন নিয়তই ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।? তবু্ও দেশ ও দশের কল্যাণ হোক।

লেখক: প্রভাষক, ইংরেজি, শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ, কুমিল্লা

 

 

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046279430389404