বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিস ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত তিনজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বেশ পুরনো। তারা দীর্ঘদিন ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের প্রধান অন্যত্র বদলির সুপারিশ করলেও তারা এখনো বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন।
তারা হলেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. মনিরুজ্জামান, বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক মো. আল মুরাদ ও একই অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. মনিরুল ইসলাম।
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. মনিরুজ্জামান ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ওই অফিসে কর্মরত। প্রথমে অফিস সহায়ক থাকলেও পরে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হয়েছেন। সে হিসেবে একই দপ্তরে তিনি কর্মরত আছেন ১৪ বছরের বেশি সময়।
আর বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক মো. আল মুরাদ এ কার্যালয়ে যোগদান করেছিলেন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ৮ বছর কর্মরত আছেন একই কার্যালয়। আর ওই অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. মনিরুল ইসলাম ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৭ বছরের বেশি সময় একই অফিসে কর্মরত আছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত এ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এমপিও, শিক্ষকদের পদোন্নতি, প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক মো. আল মুরাদের হাতে অবৈধভাবে রয়েছে পাসওয়ার্ড। দীর্ঘদিন একই অফিসে কর্মরত থেকে তারা একটি সিন্ডিকেট করে নানা অপকর্ম করছেন বলেও শোনা যায় শিক্ষকদের মুখে মুখে।
সম্প্রতি এক চাকরিচ্যুত প্রধান শিক্ষক তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। সে অনুযায়ী অভিযোগ তদন্ত করেন খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হারুনর রশিদ। গত ২৮ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান ওই কর্মকর্তা। ওই তিনজনসহ মোরেলগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানকে বদলির সুপারিশ করেন তিনি।
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল হান্নান, মোরেলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. মনিরুজ্জামান, জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক মো. আল মুরাদ ও একই অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. মনিরুল ইসলাম দীর্ঘ বছর একই দপ্তরে চাকরি করছেন। বিভিন্ন সময়ে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শোনা যায়। তাই তাদের অন্য কর্মস্থলে বদলি করা যেতে পারে।
জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল হান্নান ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে জুন মাসে মোরেলগঞ্জ উপজেলার যোগদান করে ওই পদে ১১ বছরের বেশি সময় চাকরি করেছেন। গত আগস্ট মাসের শেষে আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক তাকে বদলির সুপারিশ করার পর গত সেপ্টেম্বর মাসে মো. আব্দুল হান্নানকে পিরোজপুরের কাওখালী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বদলি করা হয়। তবে, অন্য তিন কর্মচারী এখনো বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আল মুরাদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘কর্মকর্তারা আমাদের বদলির সুপারিশ করলেও আমরা হুকুমের দাস। তারা যা বলেন তাই আমাদের করতে হয়। এমপিওর সার্ভার থাকে কর্মকর্তাদের হাতে, পাসওয়ার্ড থাকে তাদের হাতে। তবে কোনো কিছু হলেই আমাদের ওপর চাপানো হয়। টাকা খান তারা আর দায় চাপান আমাদের মতো কর্মচারীদের ওপর।
মো. মনিরুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। এক জায়গায় কাজ করলে সবার মন রক্ষা করা যায় না।
মো. মনিরুজ্জামানও দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।