প্রশাসন ক্যাডারের ওপর বেজায় বীতশ্রদ্ধ তারা। একজন অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক, অপরজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক। দুজনেই চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের চাকুরে। মানে শিক্ষক। তারচেয়েও বড় কথা, তারা শিক্ষা ক্যাডার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হয়েছেন। এ কারণে তাদের কোনো কোনো সহকর্মী নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দাবি করে বসেন। এই দুজন সেটা মনে করেন কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বকে খুবই ছোট মনে হয়েছে তাদের। তাই প্রশাসন ক্যাডারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালনকারী বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে অহেতুক বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন। তাদের অসহযোগিতামূলক আচরণে নির্বাচনী প্রশিক্ষণই ভণ্ডুল হওয়ার উপক্রম হয়। তবে, সেখানেই ঘটনার শেষ নয়। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য চলাকালে ওই দুই শিক্ষা ক্যাডারের ‘সাইডটকে’ গোটা অনুষ্ঠানস্থলই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষা ক্যাডারকে বিব্রত হতেও দেখা যায়। তবে বেপরোয়া হয়ে ওঠা ওই দুই শিক্ষক পদের চাকুরে ক্যাডার কারোরই তোয়াক্কা করেননি।
এ ঘটনা ঘটে গত ২০ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও নগরীর একাংশ) আসনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণে। অবশেষে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ওই দুই কলেজ শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা হলেন- সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম ও প্রভাষক রিবেন ধর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান স্বাক্ষরিত আদেশে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত বুধবার তাদের বরখাস্তের আদেশ চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজে পৌঁছে। কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার নুর তাদের বরখাস্তের বিষয়টি দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ১১ জানুয়ারি অর্ডার হওয়ার পর তাদের সেদিন থেকেই পরীক্ষা এবং ক্লাস থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ওই দুই শিক্ষক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
ওই দিনের পরিস্থিতি ওইদিনই লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী আবদুস সালাম ও রিবেন ধরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।
ওই দুই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরী ও তৎসংলগ্ন আসনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ চলাকালে ওই দুই শিক্ষক রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের তৃতীয় গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা হওয়ার পরও তাদের প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব কেনো দেয়া হয়েছে।
রিটর্নিং অফিসার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার কথা তাদের জানালে তারা এ নিয়ে নানা ‘অবান্তর’ মন্তব্য করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা এর সুরাহা না হলে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন না বলে জানিয়ে দেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার মধ্যে প্রশিক্ষণের আয়োজন ভণ্ডুল হওয়ার উপক্রম হয়। এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বক্তব্য রাখতে উঠলে তাকে লক্ষ্য করেও দু’জন ‘অপ্রাসঙ্গিক ও অযাচিত’ মন্তব্য করেন। এ নিয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গত ১১ জানুয়ারি সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বিধি ১২ (১) অনুযায়ী তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। এর আগে, তাদের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত দুই শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।