শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাবিদদের মতশিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত। প্রাথমিকেই বহু ধারার শিক্ষাব্যবস্থা। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেয়া যায়। এসব ধারা থেকে প্রাপ্ত সনদেরও রয়েছে মানের তারতম্য। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে না। ১৯৭৫-পরবর্তী প্রত্যেকটি শিক্ষানীতিতেই বেসরকারি খাতে শিক্ষা বিস্তারের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নিয়ন্ত্রণহীন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষারও ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। কোনো কোনো মাধ্যমে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে দেশের শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।  

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সর্বজনীন গণমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি: বর্তমান প্রেক্ষিতে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের শিক্ষাবিদরা এসব মতামত দেন। সভার আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আন্দোলন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন।

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও দেশে সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক মুখে বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো আইন প্রনয়ণ করা হয়নি। কোনো শিক্ষানীতিই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করেনি। মূল ধারার শিক্ষাব্যবস্থাতেও রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে বিপুল তারতম্য। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ একই শহরে একই কারিকুলামের আওতায় কোথাও কয়েক হাজার টাকার বেতনে শিক্ষা কিনে নেয়ার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি অল্প টাকায় মলিন শিক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।’

ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থারও ব্যাপক প্রসার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শিক্ষা ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ৯২৬৮টি আলিয়া মাদরাসা রয়েছে; যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ জন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদে দেয়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণির তথ্য অনুযায়ী কওমী মাদরাসা আছে ১৯ হাজার ১৯৯টি। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ লাখের মতো। কওমি মাদরাসাগুলোর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন-২০১৮ এর জন্য ৬টি শিক্ষাবোর্ডকেও স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও রয়েছে হাফেজিয়া, এবতেদায়ি, ফোরকানিয়া মাদরাসা বোর্ডের আওতায় শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থী। সঠিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানা যায়নি। এই শিক্ষাব্যবস্থা মূলত বিশ্বাসভিত্তিক এবং কারিকুলামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।’

ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা কারিকুলামও সরকারি নির্দেশ মেনে চলে না উল্লেখ করে কাবেরী গায়েন বলেন, ‘ব্যানবেইসের ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১৪২টি স্কুল রয়েছে। যদিও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের মতে এই সংখ্যা ৩৫০টি। কিন্ডার গার্টেন স্কুল বাদেই শিক্ষার্থীদের সংখ্যা তিন লাখের মতো। বাংলাদেশ কিন্ডার গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে সাড়ে চার হাজার কিন্ডার গার্ডেন স্কুল রয়েছে। শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ।’

বিজ্ঞান শিক্ষার অবস্থা শোচনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ সরকারি স্কুলেই বিজ্ঞান শিক্ষার অবকাঠামো তৈরি হয়নি। বিজ্ঞানী তৈরি করার জন্য কোনো সরকার আগ্রহ দেখিয়েছে এমনটা জানা নেই। অনেক সরকারি স্কুলেই বিজ্ঞান শেখানোর উপযুক্ত শিক্ষক নেই, ল্যাবরেটরি নেই, প্রয়োজনীয় বইপত্র নেই। সরকারি উদ্যোগে রাসেল কম্পিউটার ল্যাব কিছু কিছু স্কুলে দেয়া হলেও সেই ল্যাবে শিক্ষার্থীদের কাজ করতে দেয়া হয় কতটুকু, সেটি গবেষণার বিষয়। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য সরকারের বরাদ্দইবা কী? এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ হতাশাজনক। বার্ষিক বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হয় শিক্ষক কর্মকর্তাদের বেতন এবং বাকি টাকা ব্যয় হয় ভবন নির্মাণে।’

সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রুস্তুম আলী খোকনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক  ড. জোবাইদা নাসরীন, দৈনিক কালবেলার বার্তা সম্পাদক রাজু আহমেদ, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আকমল হোসেন প্রমুখ। 

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035960674285889