শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে বাড়ছে জনবল, কমছে অর্থ বরাদ্দ ও কাজের পরিধি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে বাড়ছে জনবল, কমছে অর্থ বরাদ্দ ও কাজের পরিধি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) জনবল বাড়লেও অর্থ বরাদ্দ কমছে। আর এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই কমছে কাজের পরিধিও। সংস্থাটি গত চার বছরে নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনি। আবার অবকাঠামো নির্মাণের নতুন কোন ক্ষেত্রও তৈরি করতে পারেনি।

সম্প্রতি ইইডি থেকে নতুন কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেগুলো নাকচ হয়ে যায়। এতে সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা ‘হতাশা ও অসন্তোষ্ট’ ব্যক্ত করেন। কারণ বর্তমানে চলমান বেশির ভাগ প্রকল্পই আগামী দুই-এক বছরে শেষ হয়ে যাবে। এরপর সংস্থাটির কাজের পরিধি একেবারেই ন্যূনতম পর্যায়ে চলে আসবে। ‘অলস’ সময় কাটাতে হবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। রোববার (৮ জানুয়ারি) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সংস্থাটির সাবেক দু’জন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ইইডির যে জনবল, ৫-৬ বছর আগেও তা প্রায় অর্ধেক ছিল। ওই সময় অর্ধেক জনবল দিয়েই বছরে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ হতো। এখন প্রায় দ্বিগুণ জনবল নিয়েও আগের তুলনায় অর্ধেক অবকাঠামো নির্মাণ কাজ হচ্ছে না। এজন্য ‘অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে দায়ী করছেন সাবেক প্রকৌশলীরা।

জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমঝোতার ভিত্তিতে ইইডি কর্মকর্তারা গত বছর অন্তত ১১টি প্রকল্পের প্রস্তাবনা (প্রকল্প দলিল) প্রণয়ন করে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা ওইসব প্রকল্পের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। আবার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ইইডি কর্মকর্তারাও ‘ঠিকমত’ ব্যাখ্যা ও যুক্তি দেখাতে পারেনি বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. একেএম শফিউল আজম জানান, ইইডি প্রধানত মাউশির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ করে। কিন্তু তারা অনেক প্রকল্পই গ্রহণ করে যেগুলোর সম্পর্কে মাউশিকে আগাম ঠিকমতো জানানো হয় না। তাছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় একাডেমিক ভবন নির্মাণে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের আগে এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।

ইইডির প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হলো ‘নতুন জাতীয়করণকৃত কলেজসমূহের উন্নয়ন’, ‘নতুন জাতীয়করণকৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’, ‘বেসরকারি কলেজসমূহের উন্নয়ন’, ‘সরকারি-বেসরকারি কলেজসমূহের ছাত্রীদের হোস্টেল নির্মাণ’, ‘এমপিওভুক্ত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরসহ অবকাঠামো উন্নয়ন’, ‘হাওর এলাকায় অবশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন’, ‘ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের নতুন নির্মিত ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ’, ‘হাওর এলাকায় ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ (সৌদি আরবের অর্থায়নে) (উপজেলা সদরে)’ এবং ‘নতুনভাবে সৃজিত ৪৮৯টি উপসহকারী প্রকৌশলী, ২৭টি নির্বাহী প্রকৌশলী ও চার জেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সৌদি আরবের অর্থায়নে যে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি বিবেচনায় নিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগ থেকে জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইইডি প্রকল্পটির বিষয়ে ঠিকমতো ‘যুক্তি’ উপস্থাপন করতে পারেনি।

দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকটে ধুঁকছিল সংস্থাটি। এরপর সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালার নানা প্রচেষ্টায় এর জনবল প্রায় দ্বিগুণের বেশি অনুমোদন দেয় সরকার। জেলা পর্যায়ে অফিসও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে সারাদেশে ৬৫টি জোন অফিস রয়েছে ইইডির। ২০১৬-১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬টি।

ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শিক্ষা ভবনে (২য় ব্লক (৯ম তলা), ১৬, আবদুল গণি রোড) অবস্থিত। ২০১৮ সাল নাগাদ ইইডির অধীনে সারাদেশে ৩৬টি জোনাল অফিস ছিল, ২০১৯ সালে তা ৩৬টি পৌঁছে। প্রতিটি জোনে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

জনবল স্বল্পতার কারণে ২৪-২৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলী দিয়েই ৩৬টি জোনাল অফিস পরিচালনা করা হতো। এসব জোনাল অফিস পরিচালিত হতো সাতটি ‘সার্কেল’ অফিসের অধীনে, যার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।

২০১৮ সাল পর্যন্ত ইইডিতে মোট এক হাজার ৩২৭টি পদ ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা তিন হাজার ৮২১টি। ২০১৮ সালের আগে যেসব প্রকল্প (৭-৮টি বড় প্রকল্পসহ) নেয়া হয়েছিল সেগুলো এ বছর শেষ হচ্ছে। আগামী বছর শুধুমাত্র কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের একটি প্রকল্প চলমান থাকবে। এতে ‘বিশাল’ জনবলকে ‘অলস’ সময় পার করতে হবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারাদেশে মোট ১২ হাজার ৪৯৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও পুরোনো ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়। এর মধ্যে আট হাজার ৫৬৭টি বেসরকারি হাইস্কুল, এক হাজার ৮২৬টি কলেজ, দুই হাজার মাদ্রাসা এবং ১০৬টি সরকারি হাইস্কুল ও কলেজ। গড়ে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ হতো। এটি এখন দুই হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সীমিত জনবল নিয়ে ‘বিপুল’ সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণ হলেও বর্তমানে দ্বিগুণের বেশি পদ ও জনবল নিয়েই সংস্থাটিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘শীর্ষ’ পদগুলোতে দক্ষ জনবলের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি স্থবির হয়ে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংস্থাটির নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। তিনি নতুন প্রকল্প গ্রহণের একটি তালিকা সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। মাউশি কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে অবহিত।

জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান জানান, তারা ‘চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা’র ভিত্তিতে প্রকল্পের তালিকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা ‘রিজেক্ট’ (নাকচ) করে দিয়েছে। এখন তাদের কিছু করার নেই বলে তিনি জানান।

ইইডি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এ বছর সংস্থাটিতে মোট এক হাজার ৪৫৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শিক্ষা ভবনে (২য় ব্লক, ১৬, আবদুল গণি রোড) অবস্থিত। ইইডির অধীনে সারাদেশে ৬৫টি জোনাল অফিস রয়েছে। প্রতিটি জোনে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034329891204834