শিখন-শেখানোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুসম্পর্ক - দৈনিকশিক্ষা

শিখন-শেখানোয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুসম্পর্ক

মো. আজহারুল ইসলাম |

শিক্ষাদান পেশাটি অন্য সব পেশা থেকে একেবারেই ভিন্ন। শিক্ষাদান পেশায় ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ ফরমুলাটি গ্রহণযোগ্য কি না আমাদের অনেকেরই জানা নেই। শিখন-শেখানো কাজে একাগ্রচিত্তে নিয়োজিত নিবেদিত যারা, তারা সুখ পান তখন, যখন দেখেন তার প্রদত্ত জ্ঞানালোকে পরিপূর্ণ সেই শিক্ষার্থীরা মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, দেশ ও রাষ্ট্রের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার তাগিদে আবার একটা নতুন আধুনিক সমাজ গড়বে বলে হাল ধরেছে। দেশ-বিদেশে তথা সারা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে তার শিক্ষার আলোকবর্তিকা। তার সেই আলোকবর্তিকা দেখে হয়তো পরিতৃপ্তির ঢেকুর গিলে মহান সেই শিক্ষকটি ভুলে যায় তার শিক্ষকতা জীবনের খারাপ সময়গুলো অথবা কষ্টের দিনগুলো। মহান শিক্ষক হয়ে উঠতে পারার সার্থকতা কিন্তু এখানেই। তাইতো শিক্ষাদানে নিয়োজিতদের তাদের জ্ঞান, মেধা, অভিজ্ঞতা এবং সর্বোপরি শিক্ষক সুলভ আচরণই পাল্টে দিতে পারে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।

শিখন-শেখানোর একটা মডেল হয়ে যেতে পারে তার একাগ্রতা আর প্রবল চেষ্টায়। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রটা সেই মহান শিক্ষকদের থেকে একটু ভিন্নরূপে দেখা যায়। শিক্ষাদান পেশায় এমন অনেকেই নিয়োজিত আছেন যারা এই পেশাকে স্রেফ একটা চাকরি মনে করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক তাদের কাছে কিছু দেয়া-নেয়ার। দেয়া-নেয়ার এ পর্যায়ে শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালিত হয় ঠিকই কিন্তু শিক্ষা হয় না বরং সঠিক ও টেকসই শিক্ষাদানের পরিবর্তে তার দ্বারা গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা সমাজ দেশ রাষ্ট্রকে ভালো কিছুই দিতে পারেন না। কারণ, তাদের মেধার বিকাশ ঘটানো যায়নি। সেসব শিক্ষার্থীরা একসময় হয়তো দায়ী করবেন সেই ব্যর্থ শিক্ষককে। কারণ, তিনি শিক্ষার্থীকে ভালো আচরণ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে পারেননি। এক্ষেত্রে শিক্ষাদান পেশায় নিয়োজিত যারা তারা নিজেকে শিক্ষক বলে দাবি করেন তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্কের মাঝে কোনো দেয়াল না রেখে, কোনো রকম ভয়-ভীতি না দেখিয়ে, একজন প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারা গেলে সেই শিক্ষক নিশ্চয়ই তার শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন। শিখন-শেখানোয় যে আনন্দ, পরিতৃপ্তি ও সুখ আছে তা যদি সেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মনের তেতরে প্রবেশ করাতে পারেন তবেই তিনি শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন। তাই তো শিক্ষক হতে হবে শিক্ষার্থীর একজন বাবা, একজন ভাই,  একজন মা, একজন বোন সর্বোপরি শিক্ষার্থীর মনে জায়গা করে নেয়া সত্যিকারের একজন ভালো বন্ধু, যাকে তিনি বিশ্বাস করতে শেখেন। 

শিক্ষার্থী তার দুর্বলতাগুলো অকপটেই স্বীকার করে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারেন জ্ঞানের সাগর পাড়ি দিতে। আত্মবিশ্বাস জেগে উঠতে পারে যে, তার দ্বারাই জ্ঞান আহরণ সম্ভব। যেখানে তিনি হোঁচট খেলে হয়তো বিশ্বাস পান যে, তাকে আবার সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ানোয়,  পেছনে সাপোর্ট করার মতো বা আগলে ধরার মতো কেউ একজন আছেন। শিক্ষার্থীর মাঝে কিঞ্চিৎ ভীতি থাকলেও সেখানে শিক্ষাদান ফলপ্রসূ হবে না, হতে পারে না কোনো সঠিক শিক্ষা অথবা দীর্ঘস্থায়ী শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সাফল্যের পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্কই মূলত কাজ করেছে বেশি। সে দেশগুলোতে শিক্ষা পেশায় নিয়োজিতরা অতি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তারা শিক্ষার্থীদের মননে মগজে প্রবেশ করে তাদের প্রতিভা বিকাশে অনন্য নজির স্থাপন করেন। এক্ষেত্রে বৃটেন, আমেরিকা, জাপান, নিউজিল্যান্ডের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে একথাও সত্য যে সেই দেশগুলোতে শিক্ষকদের মর্যাদা আর্থসামাজিকভাবে সবার ওপরে। তাই সত্যিকারের একজন সুশিক্ষক হতে চাইলে সেই দেশগুলোর শিক্ষা দর্শনসহ সেইসব মহান শিক্ষকদের জীবনী ও কর্মযজ্ঞ আমাদের দেশের শিক্ষকদের জানা উচিত। আর এভাবেই আমাদের শিক্ষকদেরকে শিক্ষার্থীদের মনের ভেতরে প্রবেশের রাস্তা জানতে হবে।

শিক্ষার্থীর মেধাশক্তি, আগ্রহ, অনাগ্রহ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ও পারিবারিক তথ্য সবকিছুই নজরে আনা জরুরি যদি তাকে শেখাতে চান, জ্ঞান আহরণে তাকে নিবিষ্ট করাতে চান। আর শিক্ষার্থীদের এই মনোজগতে বিচরণ করিয়ে তাকে শিখন শেখানো কাজে সহযোগিতা করার জন্যই কিন্তু শিক্ষকদের জন্য শিশু মনোবিজ্ঞান, শিশুদের মনোজগতসহ শিশুদের মানসিক, শারীরিক, দৈহিকভাবে বেড়ে ওঠানোর ধাপগুলো জানানো পেশাগত বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণের অন্যতম অংশ। তাই প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ এ কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সত্যিকারের একজন শিক্ষককে শিক্ষাদান বিষয়ে অনুশীলন, গবেষণা করা ও ক্রমাগত শিক্ষাদানের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সরিয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, অভিজ্ঞতার আলোকে পাঠদান প্রক্রিয়ায় বিশেষত্ব আনা জরুরি। এতে করে শিক্ষার্থীদের মেধা-প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব একজন সুশিক্ষক হয়ে সঠিক টেকসই পাঠদানের মাধ্যমে তাদের জ্ঞান আহরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া যায়। বর্তমান কারিকুলামের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় নিয়ে মানসম্মত বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাদানে নিয়োজিত থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে সকল শিক্ষার্থীর মেধা, যোগ্যতা ও চাহিদা মাফিক পাঠদানের কলাকৌশল প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করে সমাজ দেশ রাষ্ট্র তথা বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর মতো একটা উন্নত জাতি গঠনে নিবেদিত শিক্ষকরাই পারেন অবদান রাখতে। নিজেকে সত্যিকার অর্থেই একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, শিক্ষাদানে নিয়োজিত করা কারো জন্য খুব একটা দুরূহ কাজ বলে মনে করার কোন কারণ থাকতে পারে না। আগামীর বাংলাদেশ শিক্ষাদানের জন্য ব্রতী, মহান শিক্ষকদের অপেক্ষায়, যার ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে আচরণগত পরিবর্তনে সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে। এমন শিক্ষক যদি আমরা তৈরি করতে পারি তাহলে শিক্ষাব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনে অবদান রাখা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার কলেজিয়েট ইনস্টিটিউট, পঞ্চগড় 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067610740661621