দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার, ভর্তি ও আবাসিকতা বাতিল এবং সতর্ক করাসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৪৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মীও আছেন। ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আদেশে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থী নির্যাতন, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, মাদকসংশ্লিষ্টতা, র্যাগিং, ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রক্সি দেওয়ার মতো পৃথক ২১ ঘটনা।
আদেশ অনুযায়ী, বিভাগের শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক উল্লাহকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আন্তঃবিভাগ ফুটবল-২০২২ প্রতিযোগিতা চলাকালীন এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষার্থী আবু সিনহা, আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে গণিত এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ঘটনায় জড়িত থাকায় গণিত বিভাগের সানজিদ হাসান আরিফ (অনার্স পর্যায়ে) ও হাফিজুর রহমানকে (মাস্টার্স পর্যায়ে) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ঘটনায় গণিত বিভাগের মহিউদ্দীন পাটোয়ারী ও কাউসার জাহান রবিনকে চূড়ান্ত সতর্ক করাসহ একই বিভাগের অমিত মণ্ডল ও এ কে এম বাশার অনিককে ক্ষমা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবু সিনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।
অসদুপায় অবলম্বনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, প্রক্সিপ্রদান ও অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তা করার অভিযোগে লোকপ্রশাসন বিভাগের আল শামস তামিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইয়াছির আরাফাত, ফোকলোর বিভাগের নজরুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফজলুল করিম মাহিন, আইন বিভাগের শফিউল্লাহ, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিশির আহমেদ শিহাব, মহিবুল মমিন সনেট ও স্বপন হোসাইন, ফিশারিজ বিভাগের আলিফ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের হাসিবুল ইসলাম শান্ত, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাকোয়ান সিদ্দিক এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রাজু আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার রায় হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। একই অভিযোগে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবীবের ভর্তি বাতিল, ফোকলোর বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শোভনের ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
এর মধ্যে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত)। হাসিবুল ইসলাম শান্ত ও স্বপন হোসাইন গত কমিটির সহ-সম্পাদক। রাজু আহমেদ শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। শাকোয়ান সিদ্দিক ও মহিবুল মমিন সনেট শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। আর মো. শোভন শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার ভাতিজা।
প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ, মাদকসেবন, র্যাগিং ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের পৃথক পৃথক ঘটনায় অভিযুক্ত ফিশারিজ বিভাগের অমর কুমার রায়, ফোকলোর বিভাগের সাইফুল ইসলাম, আরিফ বিন সিদ্দিক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সোহানুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর সাহা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের নাঈম আলী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সোলায়মান, সংস্কৃত বিভাগের আল-আমিন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নজরুল ইসলাম, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মিনহাজুল আবেদীন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাজ্জাদ জামান সজিব, সাবিত হাসান, সৌরভ দত্ত, সংগীত বিভাগের কাওসার হামিদ, মেহেদী হাসান ও শাহরিয়ার আলম, নাট্যকলা বিভাগের লিনা মনজিলা, সমাজকর্ম বিভাগের নওরিন শর্মিলি শায়লি ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রাজু আহমেদকে সাময়িক বহিষ্কার এবং সতর্ক করা হয়েছে।
এসব অভিযোগে ফাইন্যান্স বিভাগের মাহফুজুর রহমান রিফাত এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বাকি বিল্লাহ’র হলের আবাসিকতা বাতিল, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুনের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ায় ক্যাম্পাসে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা, আইন বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদের সনদপত্র বাতিল ও ক্যাম্পাসে আবস্থানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ভাস্কর সাহা ও নাঈম আলী রাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোলায়মান সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, শৃঙ্খলা পরিপন্থি বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন বেশি সক্রিয়। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহবান- তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে, কাউকে হয়রানি না করে। নিজে হয়রানির শিকার হলে যেন অভিযোগ দেয়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।