চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল শিক্ষকসহ নানা সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ। প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ যেমন এগোয়নি, তেমনি শিক্ষক থেকে শুরু করে নানা শূন্যতার মধ্য দিয়ে চলছে চিকিৎসা শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দক্ষ চিকিৎসক হয়ে উঠতে বই-পুস্তকের পাশাপাশি হাতেকলমে (প্রায়োগিক শিক্ষা) যে শিক্ষা পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করলেও কূলকিনারা মিলছে না।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ৫০জন শিক্ষার্থী নিয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারি। কলেজে অনুমোদিত পদ রয়েছে মোট ৯৬টি। যার মধ্যে শিক্ষক পদের সংখ্যা ৭৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৩৫ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধ্যাপকের সব পদই খালি। তবে অনুমোদিত পদের বাইরে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে একজন অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন। সহযোগী অধ্যাপকের পদ ১৯টি। যারমধ্যে ১২টি পদ শূন্য। আর সহকারী অধ্যাপকের ১৯টি পদের মধ্যে ১৬ জন কর্মরত আছেন। প্রভাষকের ২৪টি পদের মধ্যে কর্মরত মাত্র ১০ জন। প্যাথলজি বিভাগে কিউরেটরের পদটিও শূন্য। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীর ২০টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর গত পাঁচ বছরে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের স্থান নির্ধারণই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশে নতুন ৬টি নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের জন্য একটি ডিপিপি তৈরি হয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে একটি টিম হবিগঞ্জ শহরতলির রিচি এলাকায় হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত প্রায় ৩০ একর ভূমির হাইড্রোলজিক্যাল ও মফোলজিক্যাল পরীক্ষা শেষ করেছে। এরপর কাজের কাজ কিছুই এগোয়নি। অন্যদিকে সদর আধুনিক হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পসে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপাকে রয়েছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একইসঙ্গে কলেজের কারণে সদর হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। সংকট সমাধানে মাস দুয়েক আগে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তখন অধ্যক্ষ ডা. সুনির্মল রায় এক মাসের মধ্যে কিছু সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
বিরাজমান সংকট প্রসঙ্গে কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র মোশাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুধু পাস করার জন্য পড়ছি। বছর শেষে ডাক্তার হব। কিন্তু হাতেকলমে যে শিক্ষা পাওয়ার কথা তা পাচ্ছি না। একটি মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা জরুরি। কিন্তু এই মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে শিক্ষকের সঙ্গে ওয়ার্ড ঘুরে রোগী দেখার সুযোগ তেমন হয়ে ওঠেনি। কারণ চিকিৎসকের অভাবে অধিকাংশ রোগীকেই সিলেট বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সুনির্মল রায় বলেন, ‘কলেজের আড়াই শতাধিক ছাত্রছাত্রীর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে সদর হাসপাতালে দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। রোগী সংকুলান করতে না পারায় হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষক-ছাত্রদের আবাসন থেকে শুরু করে সবকিছুরই সংকট রয়েছে। সমস্যা নিরসনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিভাগে দৌড়াদৌড়ি করছি। কলেজ ক্যাম্পাসের জন্য ৩০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব রয়েছে। মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। সয়েল টেস্ট হয়েছে। এরপর কী হয়েছে আমার জানা নেই।’