দৈনিক শিক্ষাডটকম, চবি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়ের টাকা উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ভাগাভাগি করে নেন এমনটি মন্তব্য করেছেন এমপি মুজিবুল হক চুন্নু। জাতীয় সংসদে চবি নিয়ে এমন বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মুজিবুল হক চুন্নুর দেওয়া একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায় চুন্নু একটি পত্রিকার সংবাদ থেকে বলেন, প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে চবি প্রশাসন ২৩ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে। ভর্তি ফরম বিক্রি থেকে পাওয়া টাকা চবির নিজস্ব তহবিলে জমা হয় না। ফরম বিক্রির এই টাকা উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকরা নানা হিসেবে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। চবি ছাত্রলীগ অতীতের মতোই এই টাকা ভাগ- বাটোয়ারার অংশ হতে চায়। এইবার বেশি টাকা দাবি করে ছাত্রলীগ ৫০ লাখ টাকা চায়। এই টাকা না পেয়ে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অশান্ত রাখছে।
চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারকে নিয়ে চুন্নু ওই ভিডিওতে বলেন, চবিতে যে কোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে উপাচার্য পদে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের দায়িত্ব পালন চার বছর পূর্ণ হয়েছে। যে কোনো সময় চবির উপাচার্য পরিবর্তন হতে পারে। নিয়োগসংক্রান্ত নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ড. শিরীণকে দ্বিতীয়বার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না এটা অনেকটাই চূড়ান্ত।
জাতীয় সংসদে মুজিবুল হক চুন্নুর এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য, অনভিপ্রেত ও ভিত্তিহীন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিচালনার জন্য খরচের বিভিন্ন খাত ডিনস কমিটি কর্তৃক সুনির্দিষ্ট করা আছে। এ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদে গৃহীত এবং অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে খরচ করা হয়।
বিভিন্ন খরচের খাতের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পত্রিকায় ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, অনলাইনে আবেদন গ্রহণ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র মডারেশন, প্রশ্নপত্র কম্পোজ, প্রশ্নপত্র ছাপানো, ফটোকপি, প্রশ্নপত্র প্যাকেজিং, উত্তরপত্র ছাপানো, ফলাফল প্রস্তুত করা, ফলাফল ছাপানো, কাগজপত্র ও স্টেশনারী ক্রয়, পরিদর্শকের সম্মানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মানী, আপ্যায়ন, পরিবহন ও প্রকৌশল খাতে খরচসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা প্রতি বছর সম্মানিত ইউনিট প্রধানরা পরিচালনা করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভর্তি পরীক্ষার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব আয় হিসেবে ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। তাই সংসদ সদস্যের বক্তব্য তথ্য নির্ভর নয় বরং অনুমান নির্ভর। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি'র সঙ্গে ছাত্রলীগসহ কোনো ছাত্র সংগঠনের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে মর্মে চুন্নুর বক্তব্য অযৌক্তিক উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশক্রমে ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল থাকবেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি।