দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রবেশের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তারা পরীক্ষা বর্জন করে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভের পর, পাঁচ দফা দাবিতে রোববার (৩১ মার্চ) আবার বিক্ষোভের ঘোষণা দেন। তবে আজ সকাল থেকে তাদের দেখা মেলেনি ক্যাম্পাসে।
সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আসেননি রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা কোনো শিক্ষার্থী। বন্ধ আছে ক্লাস পরীক্ষাও। শিক্ষার্থী আনা নেয়া করা সব পরিবহনই ক্যাম্পাসে ফিরেছে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে ‘সহমত’ জানিয়ে বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার জানান, দাবি পূরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য সময় প্রয়োজন ।
তবে বিক্ষোভকারীরা বুধবার মধ্যরাতের পর ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক হিসেবে এক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে তাকে শনিবার বেলা দুইটার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সময় বেঁধে দেন। তারা আজ রোববারও পরীক্ষা (টার্ম ফাইনাল) ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন।
ছাত্ররাজনীতির পক্ষে বিপক্ষে উত্তাল বুয়েট। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে শিক্ষার্থী ইমতিয়াজসহ ৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কারের আল্টিমেটাম দেন তারা। এদিকে, আরেক পক্ষের দাবি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে বুয়েটে মৌলবাদী স্বার্থ কায়েমে ব্যস্ত হিজবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির।
আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ছাত্রলীগ: আন্দোলনকারীরা
নিষিদ্ধ ছাত্র রাজনীতি, বন্ধ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। এভাবে কেটে গেছে ৪ বছর। এরইমধ্যে ২৮ মার্চ মধ্য রাত থেকে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে বুয়েট। ক্যাম্পাসে রাজনীতির বীজ বপনের চেষ্টা হচ্ছে এমন অভিযোগে শুক্রবার আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছয় দফা দাবিতে শহীদ মিনারের পাদদেশে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চারিদিক।
দ্বিতীয় দিন শনিবার সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শ্লোগানের তীব্রতা, বাড়ে শিক্ষার্থীদের জমে থাকা ক্ষোভ। তবে তখনও দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। ১১টায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আল্টিমেটাম দেয়া হয়। নিয়ম ভাঙার দায়ে ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে স্থায়ী বহিষ্কার সময় বেঁধে দেয়া হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত।
এরপর শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তীব্র গরমে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জাগাতে না পেরে অনেকটা অসহায় হয়েই দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনের সমাপ্তি টানা হয়। তবে রোববার সকাল থেকে আরও কঠিন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
একই দিন অভিযোগের তীর ঘুরিয়ে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশে সরব হয়েছে বুয়েট ক্যাম্পসে। তাদের দাবি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে বুয়েটে নিজেদের মৌলবাদী স্বার্থ কায়েম করতে ব্যস্ত হিজবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির। জাতীয় দিবস সামনে আসলেই নানা অজুহাতে উস্কে দেয়া হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার জানান, ৬ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ৮ তারিখের মধ্যেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে সময় প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত: ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় সংশ্লিষ্টতা মেলে ছাত্রলীগ কর্মীদের। এরপর শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি।