সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছে। এরই মধ্যে হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের কোটা বাতিল করে দেয়া প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলে স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। চর্তুমুখী এই আন্দোলনে কার্যত এক ধরনের অচল অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জানা যায়, গত ১ জুলাইয়ের পর থেকে বুধবার (১০ জুলাই) পর্যন্ত শিক্ষকদের টানা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে কুবিতে কোনো ধরণের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া গত ৭ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্ণ দিবসের কর্মবিরতির ফলে সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ। পাশাপাশি সোমবার (৪ জুলাই) থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। এর একদিন পর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় তারা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও কর্মবিরতিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের অফিস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এই চর্তুমাত্রিক আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত পেনশনসংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম সবকিছুই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (১০ জুলাই) শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে তাদের দাবির পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের পাশেই একই দাবি অবস্থান গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, 'আজকেও আমাদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের দাবিগুলো হলো-প্রত্যয় স্কিম বাতিল ও বেতন কাঠামো পূর্বের মতো করে দেয়া। আমরা শিক্ষক ফেডারেশনের নির্দেশে কর্মসূচি পালন করছি। যতদিন আমাদের দাবিসমূহ পূরণ না হয় ততদিন আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।'
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, 'আমরা পেনশন স্কিম বাতিলের জন্য আজকেও কর্মবিরতি পালন করেছি। আমরা চাই আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো সঠিক জায়গায় পৌছে যাক এবং আমাদের এই যৌক্তিক দাবি পূরণ হোক। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা পূর্ণ দিবস কর্ম বিরতি পালন করতে থাকবো।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন বলেন, 'আমাদের যে আগের পেনশননীতি ছিলো আমরা ফেরত চাই। এই নতুন পেনশনের স্কিম বাতিল না করা হলে আমরা কর্মবিরতি পালন করতে থাকবো। পাশাপাশি যে অভিন্ন নীতিমালা প্রয়োগের প্রস্তুতি চলছে সেটিও আমরা বাতিল চাই। আর যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে আমরা কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবো।'
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী গণআন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অনলাইনে প্রতীকী কর্মসূচি পালন করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, 'ছাত্রসমাজ এদেশের সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে গত ৪ জুলাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ করে আসছি। গত ৮ জুলাই আমরা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। আজও আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে।"