সম্মান আত্মিক বন্ধনের নিঃশব্দ ভাষা - দৈনিকশিক্ষা

সম্মান আত্মিক বন্ধনের নিঃশব্দ ভাষা

রাজু আহমেদ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

পারস্পরিক সম্মানবোধের চেয়ে বড় কোনো আন্তরিকতা নেই। কাউকে কোনো উপহার দিলেন কি না, একবেলা নিমন্ত্রণ করে খাওয়ালেন কি না-এসবে কিছু আসে যায় না। পাশে না বসেও, গল্প না করেও মানুষের আপন হওয়া যায় যদি পারস্পরিক সম্মান রাখেন। দামি উপঢৌকন দিলেন, উন্নত খাবার খাওয়ালেন কিন্তু সম্মান দিলেন না-কোনো লাভ নেই।

মানুষ হিসেবে কেউ ছোট-বড় যাইহোক, সবাই সবার ন্যায্য সম্মানটুকুই প্রত্যাশা করে। আত্মসম্মান আছে এমন কাউকে হাসতে হাসতে বকে দিলেও তার ভীষণ রকম লাগে। আপন-পর যিনিই হোক না কেন আপনি যদি তার সম্মানের ক্ষুধা অপূর্ণ রাখেন তবে কখনোই আপন হতে পারবেন না। বন্ধু হোক কিংবা বউ, বয়সে ছোট থেকে বৃদ্ধ, হোটেলের কর্মচারী থেকে রাস্তার ভিক্ষুক-যে যার অবস্থান অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মানটুকুন আশা করে। কেউ যখন তাকে আমিত্ব-বড়ত্বের গণ্ডিতে ভেবে অন্যদের সম্মান করতে ভুলে যায় তখন সে নিজের অপমানের পথ প্রশস্ত করে। 

আমরা যে ইউনিভার্সে বাস করি এখানে সম্মানের চেয়ে চমৎকার ও দামি কোনো উপহার নেই। সুন্দর মানসিকতা, শ্রদ্ধা-ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই সম্মান বিগলিত হয়। পারস্পরিক বোঝাপড়া, হৃদ্যতাপূর্ণ বন্ধুত্ব কিংবা পরিশীলিত কথা ও কাজের মাধ্যমে সম্মানের ক্ষেত্রে ও চর্চা অবারিত হয়। বন্ধুত্বে কিংবা দাম্পত্যে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা ধর্মক্ষেত্রে-মোটকথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরস্পরকে সম্মান করতে পারাটা ভীষণ জরুরি। যতোগুলো মানবিক গুণ আছে, সম্মান প্রদান করার শিক্ষা সর্বোত্তম।

সম্মান করার শিক্ষা পরিবার থেকে অর্জন করতে হয়, নিজের চেষ্টায় শিখতে হয় কিংবা ধর্ম সম্পর্কে জানতে হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের অনেকের মাঝেই পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শনের বোধটুকু অনুপস্থিত। আমরা সম্মান পেতে চাই কিন্তু অপরকে সম্মান দিতে চাই না। পারস্পরিক সম্পর্কে আমি প্রভু এবং অন্যরা গোলাম-এমন মনোভাব হৃদ্যতার ঘাটতি ঘটায়। 

সম্মান পারস্পরিক বিনিময়যোগ্য অমূল্য আচরণ। কাউকে অসম্মানিত করে তার কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার আশা করা অন্যায়। সম্মান ও অসম্মান অভিন্ন সূত্র অনুসরণ করে। কাউকে যতোটুকু সম্মান করবেন সেটার কয়েকগুণ ফিরে পাবেন। কাউকে অসম্মান করলে বহুভাবে অসম্মানিত হবেন। সম্মান ব্যবসা এমন এক ধারণা যা কখনোই লাভ ছাড়া ফেরে না। সমাজের সবচেয়ে মন্দ মানুষটিকেও সম্মান করে দেখুন, সবচেয়ে শুদ্ধ সম্মান সেও ফিরিয়ে দেবে। সম্মানের ক্ষেত্রটি একবারের বিনিয়োগে সারাজীবন সম্মান কামাইয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে।।

সমাজে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা চলতি পথের কোনো এক ধাপে কাউকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিলে সারাজীবন যেখানেই দেখা হোক আপনার অসম্মান হবে না।  বরং কৃতজ্ঞতায় বিনীত একটি হৃদয় পাবেন। মানুষ অর্থের ঋণ অস্বীকার করতে পারে, স্বার্থের দায় নাও মেটাতে পারে কিন্তু সম্মানের ঋণ পরিশোধে অকৃতজ্ঞ হয়-এমন সংখ্যা সামান্যই। 

আপন মানুষগুলোকে বেশি বেশি সম্মান দেখানো উচিত। বন্ধু বলে তাচ্ছিল্য, দাম্পত্যের সম্পর্ক বলে মুখে যা আসে তাই বলা, নিজের সন্তান বলে কথায় কথায় অপমান করা কিংবা আপনজন বলে মূল্যায়ন না করা-এসবের পরিণতি ভালো না। যখন কারো ব্যক্তিত্বে আঘাত করে, যখন কারো ইমেজ নষ্ট হয় তখন সে পাল্টা আক্রমণে উদ্যত হয়-হোক সে যতোই আপন। কেউ অসম্মানে পড়লে সে অস্তিত্ব সংকটে ভোগে।

অনেক ক্ষেত্রে সিনিয়র সহকর্মীরা জুনিয়র সহকর্মীদের মাত্রাতিরিক্ত বকে, বস তার অধীনকে হেনস্তা করে কিংবা শিক্ষক ছাত্রকে ভরা ক্লাসে নাস্তানাবুদ করে। এসব অনুচিত। কাউকে যদি পরিবর্তন করাতে হয় তবে তাকে একাকী নিরালায় বলতে হবে। মেথরেরও আত্মসম্মান আছে, সেও সন্তান-সংসার নিয়ে সমাজে অবস্থান করে। কাজেই ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে কিংবা সুযোগ আছে তাই যাকে-তাকে, ডেকে-এগিয়ে অসম্মান করা ঠিক নয়। 

কখনো কখনো শরীরে আঘাত করার চেয়েও অসম্মান করে কথা বলার ফল ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। পরিবার থেকে সমাজ, রাজনীতি থেকে রাষ্ট্র-পারস্পরিক যতো দূরত্ব, যতো অশান্তি তার মূলে পারস্পরিক সম্মানবোধের ঘাটতি। যেখানে সম্মানের ঘাটতি দেখা দেয় সেখানে সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়। অসম্মানের দুনিয়ায় কারো বেঁচে থাকা মুশকিল। অসহনশীল মনোভাব,  সাম্প্রদায়িকতার জুজু অসম্মানের পথকে প্রশস্ত করে। কাউকে আঘাত করে কথা বলা চরমভাবে নিন্দনীয় হওয়া উচিত। পদমর্যাদার বাইরেও যে পরিচয়ে আমরা সবাই মানুষ সেই পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে আমির ও ফকিরের ভেদাভেদ রাখা অনুচিত। প্রেসিডেন্টের সন্তানের কাছেও তার বাবার যে সম্মান, চরাঞ্চলের কোনো এক ক্ষেতমজুরের ছেলের কাছেও তার বাবার জন্য ওই একই রকম সম্মান লালিত থাকে। কাজেই মানুষ হিসেবে মানুষকে সম্মান দেখানো মনুষ্যত্বের অংশ। কাউকে দামি উপহার না দিতে পারি, নিমন্ত্রণ করে পেটপুরে খাওয়াতে না পারি কিন্তু সম্মান থেকে যেনো কাউকে বঞ্চিত না করি। অপরকে সম্মান না করলে আমাকেও সম্মানহানির মধ্যে বাঁচতে হবে। সমাজ-সংসারে আপনার সম্মান নেই-কী ভয়ংকর চিত্রকল্প একবার কল্পনা করুন তো! অসম্মান অবজ্ঞা-অবহেলার সূতিকাগার!

লেখক: প্রাবন্ধিক 

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি - dainik shiksha অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল - dainik shiksha গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ - dainik shiksha ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস - dainik shiksha সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027470588684082