সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা বদলির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে বদলিতে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের বাধা কাটলো।
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো একটি সুষ্ঠু ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন। এতোদিন বদলি নীতিমালা না থাকায় শিক্ষকেরা নানামুখী দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। দূরদূরান্ত থেকে কর্মস্থলে আসতে হতো তাদের। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকেরা দাবি করে আসছিলেন বদলি নীতিমালা হোক।
এর আগে গত ৪ মার্চ খসড়া বদলি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শিক্ষা সচিবসহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কলেজ ও মাধ্যমিকের পরিচালকেরা এবং মাউশির উপ-পরিচালক ও ঢাকার উপ-পরিচালক সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সূত্র জানায়, দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬২৭টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে ৬৪টি। এগুলোতে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার।
এতোদিন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিলো না। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে একটি পরিপত্র এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি অফিস আদেশ অনুযায়ী বদলি/পদায়ন করা হতো। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে বদলির জন্য খসড়া নীতিমালা করে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। নীতিমালায় ১৬টি পদে বদলির জন্য অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষে সরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা না থাকায় এবং বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিপত্র-অফিস আদেশ যুগোপযোগী করার উদ্দেশে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো।
নীতিমালার আওতা নিয়ে বলা হয়েছে, শিক্ষার মাধ্যমিক স্তরের সরকারি শিক্ষকদের বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে, সরকার জনস্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো শিক্ষককে বদলি-পদায়ন করতে পারবে।
বদলির সময়কাল নিয়ে বলা হয়েছে, প্রতি শিক্ষাবর্ষে শুধুমাত্র অক্টোবর মাসে আগ্রহী শিক্ষকদের বদলির আবেদন করতে পারবেন। এই সময়সীমা ব্যতীত অন্য কোনো সময়ে বদলির জন্য আবেদন করা যাবে না। তবে, অনিবার্য পরিস্থিতিতে শুধু সিনিয়র সচিব বা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বরাবর আবেদন করা যাবে।
প্রতি অক্টোবর মাসে শিক্ষকদের যুক্তিযুক্ত কারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিম্নলিখিত শর্তে সরাসরি (অনলাইনে) আবেদন করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের দরকার নেই।
মহানগর ও জেলা সদরে কর্মরত শিক্ষকের চাকরি একই প্রতিষ্ঠানে টানা ৬ বছরের বেশি হলে তাকে নিজ জেলায় অথবা কর্মস্থলের পাশের জেলায় বদলি করা হবে।
বদলির ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজ জেলা/পার্শ্ববর্তী জেলায় পদায়নে গুরুত্ব দেয়া, সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে অন্য বিষয়ে শিক্ষক বদলি/পদায়ন না করা হবে।
আবেদনের শর্তে বলা হয়েছে, বর্তমান কর্মস্থলে চাকরিকাল তিন বছর পূর্ণ হতে হবে, বদলির জন্য উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে।
আবেদন বিবেচনায় অনুসরণীয় বিষয় সর্ম্পকে বলা হয়েছে, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদের বিপরীতে অন্য বিষয়ের শিক্ষক বদলি-পদায়ন করা যাবে না।
এ ছাড়াও সমতলের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে পার্বত্য (রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) অঞ্চলে এবং দুর্গম চর ও হাওর অঞ্চলে বদলি করা হলে তাকে এক বছর সেখানে চাকরি করতে হবে। এরপর তিনি অন্য জেলায় বদলির আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে দেশের সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকেরা বদলির নীতিমালা তৈরির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন এতে বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ভারসাম্য রক্ষা হবে, যা পাঠদান কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে। তবে বছরে দুবার বদলির আবেদনের সুযোগ রাখা উচিত।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।