দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সরদার ফজলুল করিম। দর্শন চিন্তা থেকে, সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতি কোনো কিছুই যার দৃষ্টি এড়ায়নি। যার পুরোটা জীবন ছিল ত্যাগের। নিজের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা আর জ্ঞানের ভাণ্ডার আজীবন বিলিয়ে গেছেন একটি দেশ ও একটি জাতির জন্য।বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবী বলতে আজ আর কোনো একটি আদর্শের অনুসারী ব্যক্তিকে বুঝায় না। এই বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই রয়েছে শ্রমজীবী অর্থাত্ ব্যাপকতর মানুষের সংগ্রামের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য শত্রু এবং এই বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই রয়েছে শ্রমজীবীর সুহূদ, মিত্র। এই উভয় অংশের স্বার্থ এবং চিন্তাগত বিরোধই নানা আবরণে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীর চিন্তাজগতকে আকীর্ণ করে আছে।’
রোববার (২৮ এপ্রিল) ছিল শোষণের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াকু এই মনিষীর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। এদিন সকালে বাংলা একাডেমি একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান ও একক বক্তৃতার আয়োজন করে।
সরদার ফজলুল করিমের আদর্শ চিরকাল বাঙালিকে পথ দেখাবে উল্লেখ করে একক বক্তা আনিসুজ্জামান বলেন, সরদার ফজলুল করিম একজন আদর্শ শিক্ষক, গুণী লেখক, দক্ষ অনুবাদক, দায়বদ্ধ রাজনীতিবিদ এবং সমাজ বদলের স্বপ্নশীল দার্শনিক। তিনি কৈশোরকাল থেকে আমৃত্যু মানুষের মুক্তির জন্য তার জীবন উত্সর্গ করেছেন। অসামান্য মেধার অধিকারী মানুষটি তার ব্যক্তিগত সুখস্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ করে মহত্-মানবিক পৃথিবী গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষকতা জীবনে যেমন ছিলেন ছাত্রদের প্রতি কর্মনিষ্ঠ, উদার, আন্তরিক ও বন্ধু বাত্সল্য ঠিক তেমনি গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিলেন ভীষণ কোমল। কেবল তাই নয়, সময়ে অসময়ে পাওয়া অনেক লোভনীয় প্রস্তাব তিনি পাত্তা দেননি। বরং নিজেকে শাণিত করেছেন এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উজ্জীবিত করাই ছিল তার ধ্যান। তিনি দৈহিকভাবে আমাদের মধ্যে না থাকলেও তার অম্লান আদর্শ বাঙালিকে পথ দেখাবে।
মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সরদার ফজলুল করিম বাংলা একাডেমির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ। আমৃত্যু সরদার ফজলুল করিম তার অনুবাদ ও দর্শনচর্চার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মুক্তির দার্শনিক পাটাতন তৈরির কাজ করেছেন।
অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা দেন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. সরকার আমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ও গবেষক ড. সাইমন জাকারিয়া।