নোবেলজয়ী ড. ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মানে নিজের পরিবর্তন। এই দেশ নতুন করে তরুণেরা স্বাধীন করেছে। তোমরা তোমাদের ইচ্ছেমতো গড়ে তোলো। তোমাদের দেখে বিশ্ব শিখবে।’
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তরুণদের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
ইউনূস বলেন, ‘সরকার বলে একটা জিনিস আছে, কিন্তু মানুষের আস্থা নেই। যেখানেই সুযোগ যায়, সেখানেই শোষণ হয়। এটা সরকার হতে পারে না। নতুন করে যে সরকার হবে, তা মানুষকে রক্ষা করবে। মানুষের আস্থাভাজন হবে। তাহলে মানুষও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।’
এই নোবেলজয়ী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি পরিবার। আমরা একসাথে চলতে চাই।’
এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাঘাত ঘটছে, হামলা হচ্ছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের কাজ এগুলো রক্ষা করা। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসা আমাদের কাজ। আমাদের যাত্রার শত্রু এসব ষড়যন্ত্র।’
‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এমন হতে হবে যাতে করে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি।’
ইউনূস বলেন, ‘আমার ওপর আস্থা রেখে ছাত্ররা আমাকে আহ্বান জানিয়েছে, আমি সাড়া দিয়েছি। আমার ওপরে বিশ্বাস ও ভরসা রাখুন, তাহলে দেশের কোথাও কোনো জায়গায় হামলা হবে না। আমার কথা যদি আপনারা না শোনেন তাহলে আমাকে বিদায় দেন। প্রয়োজন মনে হলে আমার কথা শুনতে হবে। আমার প্রথম কথা, বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা থেকে দেশকে রক্ষা করুন।
‘আমরা আমাদের দেশের সকল সম্ভাবনা নষ্ট করে ফেলেছি। এটাকে আবার তৈরি করতে হবে। সবাইকে অনুরোধ, আমরা পরিবার। আমরা একযোগে একসাথে চলতে চাই। আমাদের সেই সুযোগ দেন। আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। পৃথিবী অবাক হয়েছে ছাত্রদের কাণ্ডে।’
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে শুরু, দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব।’
এরআগে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কারা কারা থাকছেন তা নিশ্চিত করা হবে। জানা গেছে, শপথ নেওয়ার পর রাজধানীর রমনার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উঠবেন ড. ইউনূস। দায়িত্ব পালনকালে তিনি সেখানেই থাকবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের সদস্য সংখ্যা ১৫ জনের মতো হতে পারে বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তবে সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও একই সঙ্গে দায়িত্ব নেবেন, নাকি পরে দায়িত্ব নেবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন প্রেস উইং নিশ্চিত করেছে, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হচ্ছে। প্রেস উইং জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অন্যদের নাম জানানো হবে।
সেনাপ্রধান বুধবার বিকেলে সেনা নিবাসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জানান, শপথ অনুষ্ঠানে ৪০০ জনের মতো উপস্থিত থাকতে পারেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সভায় কতজন সদস্য থাকবেন জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘১৫ জনের সদস্য হতে পারে। যেহেতু ফরমালি জানানো হয়নি, এটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।’
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। ফলে ঢাকাসহ সারা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে।