সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির অভিযোগে ঢাকার আদালতে মামলা করা হয়েছে। ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান বাদি হয়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০, ৪০৬, ৪৬৭, ৪৬৮ ধারায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ পরে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
রোববার (১৮ আগস্ট) মামলার বাদি ইমরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশ সংবিধানে যোগ করা হয়েছিলো। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছিল।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদন করলে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, "ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধান সম্মত ও বৈধ। এ সংশোধনী সংবিধানের কোন মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নাই" । রিট আবেদনকারী উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ১ মার্চ আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আটজন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছেন। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।
মামলায় বলা হয়, অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য অভিযুক্ত আমলে না নিয়ে তার চাকরি মেয়াদকালের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় প্রদান করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে তারিখে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সেই সাথে তিনি অত্র আপিল মামলার নথি বাসায় নিয়ে যান যা বেআইনি। রায় প্রদানের ১৬ মাস ৩ দিন পর পরে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়ে করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করলেন সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি।
মামলায় বলা হয়, অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ রায় প্রদান করেন। এবিএম খায়রুল হক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কর্তৃক বিগত ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে পর্যন্ত ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।