শিক্ষাবিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর শিক্ষাখাত ধ্বংসের অপকর্মে জড়িত পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নোট-গাইড প্রকাশকদের খুঁজে বের করতে এবার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
এ ছাড়াও কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে উপসচিব সিরাজুল ইসলামকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, প্রেফেসর মো. নজরুল ইসলাম, মো. কামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এনসিটিবির সফটকপি-সিডি তৈরি এবং সরবরাহ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উইং শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা যাচাই করতে বলা হয়েছে একইসঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
রোববার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আরো পড়ুন: সিডি নিতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোম্পানি মালিকরা এনসিটিবিতে!
এর আগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নতুন পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি, সিলেবাস ও নম্বর বণ্টনের সিডি অবৈধ নোট-গাইড প্রকাশকদের হাতে তুলে দেয়ার প্রতিবেদনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনসহ সারাদেশে। রোববার শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ ‘নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোম্পানি মালিকরা সিডি নিতে এনসিটিবিতে!’ শিরোনামে প্রতিবেদন দেখে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রকাশিত ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ১ম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তক এখনও মুদ্রণ ও সরবরাহ করা হয়নি। ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে যে, গাইডবই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে তাদের মুদ্রিত গাইডবই প্রকাশ করছে যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদটি শিক্ষা উপদেষ্টার নজরে এসেছে। প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোর সফটকপি গাইডবই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কে বা কারা সরবরাহ করেছে এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠান গাইডবই প্রকাশ করেছে তা চিহ্ণিত করার জন্য উল্লিখিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলো। কমিটি আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে উপযুক্ত কাজ শেষ করে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
কমিটির কার্যপরিধি সর্ম্পকে বলা হয়েছে, এনসিটিবির সফটকপি-সিডি তৈরি এবং সরবরাহ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উইং শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা যাচাই করা। যেসব পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান গাইডবই মুদ্রণের সঙ্গে জড়িত সেসব প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করা।
প্রসঙ্গত, এর আগে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ ‘নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোম্পানি মালিকরা সিডি নিতে এনসিটিবিতে!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
প্রতিবেদন নজরে আসলে এমন অপকর্মে জড়িত পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নোট-গাইড প্রকাশকদের খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা সংস্থা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের এসবি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংস্থাগুলোকে যতো দ্রুত সম্ভব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এমন নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আজ সকালেই দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর প্রতিবেদন দেখামাত্রই গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছি দোষীদের খুঁজে বের করতে। কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।
জানা যায়, গত প্রায় ২০ বছর ধরে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সম্পাদনা শাখা থেকে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি, নম্বর বন্টন ও সিলেবাসের আগাম তথ্য নোট-গাইড প্রকাশকদের কাছে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। যারা পাঠ্যবই ছাপার ঠিকাদারি পায় তাদের মধ্যে বড় ঠিকাদারদের নোট-গাইড কোম্পানি রয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহ করে নোট-গাইড লিখে ও প্রকাশ করে বাজারজাত করে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করছে কয়েকটি কোম্পানি। তারা পাঠ্যবই ছাপা বন্ধ রেখে নোট-গাইড ছাপে। আর এসব অপকর্মে এনসিটিবির এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগ রয়েছে। পাঁচ আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও সম্পাদনা শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বরাবরের মতোই এবারো পাঠ্যবইয়ের পান্ডুলিপির সিডি (কমপ্যাক্ট ডিস্ক), সিলেবাস ও নম্বর বণ্টন নিতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এনসিটিবিতে ঘুরঘুর করছেন নিষিদ্ধ নোট-গাইড কোম্পানির কতিপয় মালিক। যদিও গত ১৫ বছরে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে আইনে নিষিদ্ধ নোট-গাইডকে সহায়ক বই নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে যাহা লাউ তাহাই কদু। আর পাঠ্যবই ছাপা স্থগিত রেখে নোট-গাইড বই ছাপছেন বই ছাপার ঠিকাদাররা। ফলে সময়মতো ৪১ কোটি পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণ নিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।