সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ - দৈনিকশিক্ষা

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার ৩

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন ওয়াহিদুর রহমান, মশিউর রহমান ও আ. মোতালেব মিন্টু। ওয়াহিদুর রহমান ও মশিউর রহমান ভবনের মালিক এবং অপরজন ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামে দোকানের মালিক। 

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশীদ।

হারুন অর রশীদ বলেন, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছে ডিবি, সিটিটিসি ও র‌্যাবসহ অন্যান্য সংস্থা। ওই বিস্ফোরণের কী কারণ তা উদঘাটনে আমরা ভবনের মালিক, দোকান মালিকসহ বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। ঘটনাটি ডিবি পুলিশ শুরু থেকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। 

তিনি বলেন, সিদ্দিকবাজারের যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে তার নাম কুইন স্যানিটারি মার্কেট। এক সময় এটার নাম ছিল কুইন ক্যাফে। ১০ তলা ভবনের প্ল্যান করা হলেও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেজমেন্ট ও একতলা কমপ্লিট ছিল। বেজমেন্টে ছিল রান্নাঘর আর একতলায় ছিল খাবারের হোটেল। এই রান্নাঘরে কমার্শিয়াল গ্যাসের বড় লাইন ছিল যা পরে লিখিতভাবে তিতাসের কাছে সারেন্ডার করা হয়।

ডিবি প্রধান বলেন, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ভবনটি সাততলা পর্যন্ত কমপ্লিট করা হয়। বর্তমানে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বেসমেন্টসহ সাত তলা পর্যন্ত কমপ্লিট আছে। ভবনের প্রকৃত মালিক মরহুম হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমান। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুতে তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী বর্তমানে ভবনটির মালিক।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভবন পরিদর্শন পরবর্তী পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ভবনটির বেজমেন্টে পার্কিংয়ের কথা থাকলেও সেখানে এক সময় রান্না ঘর ছিল। বর্তমানে ‘বাংলাদেশ স্যানিটারি’ নামক একটি কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠানে স্যানেটারি মালামাল বিক্রি করা হয় প্রায় ১৮শ স্কয়ার ফিটের এ আন্ডারগ্রাউন্ডে যা সম্পূর্ণটাই গ্লাসে ঘেরা। বড় বড় দুটি এসিতে ঠান্ডা করা হয় এ স্যানিটারি দোকান। 

ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডে একটি বড় পানির ট্যাংকি আরো আছে। সাততলা ভবনের কোথায় সুয়ারেজ সেপটিক ট্যাংক অবস্থিত তা ভবনের মালিকরা নিশ্চিত না। ধারণা করা হয় উত্তর পাশের ভবনের সাথে এ ভবনের যে আড়াই/ তিন ফিট গলি আছে সেখানেই দুই ভবনের সেপটিক ট্যাংকি অবস্থিত।

ডিবির পর্যবেক্ষণ

• বেজমেন্টে কার পার্কিং থাকলে বাতাসের ভেন্টিলেশন থাকত। কোনো গ্যাস জমা হতো না। বিস্ফোরণও হয়তো হতো না।

• সাত তলা ভবনের বেজমেন্টসহ তিনটি ফ্লোরের কমার্শিয়াল লোকজন, বাসা বাড়ির লোকজনের পয়োবর্জ্য যেখানে জমা হয় দীর্ঘ সময় সেই জায়গা পরিষ্কার না করায় সেখানেও বায়ো গ্যাসের জন্ম হতে পারে। যা বিভিন্ন কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে।

• একসময় এই বেজমেন্টের রান্নাঘরে কমার্শিয়াল লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হতো যা পরবর্তীতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়ির অন্যান্য ফ্লোরের ডোমেস্টিক লাইন এখনো চলমান। ফলে এই লাইন সম্পূর্ণ বন্ধ না হয়ে সেখান দিয়েও তিতাস গ্যাসের লিক হতে পারে। কোনোভাবে জমা গ্যাসে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ হতে পারে।

• ভবন মালিকদের তথ্য মতে, মূল ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও তার উত্তরপাশে ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের মাঝখানে সরু একটি গলি আছে। এ গলিতে পয়োবর্জ্য, সেপটিক ট্যাংকি, এসির আউটার ইত্যাদি আছে। বিস্ফোরণে সেপটিক ট্যাংকের পাশের দেয়ালগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পয়োবর্জ্য পদার্থের বায়ো গ্যাসের বিস্ফোরণে এমনটি হতে পারে।

• এই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড বা বেজম্যান্টে বড় একটি স্যানিটারি দোকান, নিচ তলায় ৫টি দোকান, দোতলাতে কাপড়ের ২টি দোকান ছিল যেগুলোর জন্য অনেক কাঁচ ও ইন্টেরিয়রের কাজ করা হয়। পাওয়ারফুল এসি ব্যবহার করা হয়। এসিগুলোকে সময়ে সময়ে সার্ভিসিং না করালে বা ত্রুটিপূর্ণ থাকলে তা থেকেও বিস্ফোরণ হতে পারে। যেটা ২/৩ বছর আগে গুলশানে আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টারে ঘটেছিল।

• ভবনটি কোনো পরিত্যক্ত পাবলিক স্পেস/ভবন নয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও সিসি ক্যামেরার সার্ভিলেন্স ছিল এটি। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির জন্য যে পরিমাণ বিস্ফোরক প্রয়োজন তা এখানে সবার অজান্তে জমা রাখা প্রায় অসম্ভব।

• বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, ঢাকা মহানগরীর সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিম আলাদা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে রিপোর্ট দেবেন। তাতেই প্রকৃত কারণটি জানা যাবে। তবে এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরক বা স্যাবোটাজের কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি।

• ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা ছিল। সিসি ক্যামেরার ডিভিআর থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে। ভবনের মালিক, দোকানের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরণের কারণ জানা চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ভবন মালিক ও যারা ভাড়া নিয়ে সেখানে ব্যবসা ও বসবাস করে আসছিল তারা ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না দাবি করে হারুন বলেন, সেপটিক ট্যাংকি অপরিস্কার রাখা, এসি মেরামত না করা, গ্যাসের লাইন বন্ধ না রাখার দায় এড়ানো যায় না। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছিল না, পার্কিং স্থানও ভাড়া দেওয়া ছিল। সব মিলিয়ে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। এজন্য তিনজনকে গ্রেফতার করেছি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038459300994873