রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম সাগরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বিভাগ ও আইন উপদেষ্টার সুপারিশে আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠিত কমিটির তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। বিভাগ কর্তৃক গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। তাদের সুপারিশে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি অভিযোগের তদন্ত চলছে বলেও জানান তারা। এর আগে গত ১ অক্টোবর বরখাস্ত সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরের একটি অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ সাদ আহমেদ।
তিনি বলেন, আইন বিভাগের ‘সত্যানুসন্ধান’ নামক কমিটির তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আইন উপদেষ্টার কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চিঠি আসে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আইন উপদেষ্টা এবং বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সুপারিশে সাদিকুল সাগরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আইন বিভাগের ওই শিক্ষক বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে বাইপাস করে ডিপার্টমেন্টের চাপে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যৌন নিপীড়ন নীতিমালার ৫ ধারা অনুযায়ী বিভাগের কমিটি বেআইনি। ২৪ তারিখের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌন নিপীড়ন সেলের অভিযোগ কমিটিকে অভিযোগ তদন্ত করতে এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেটিই আইনসম্মত। পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক কমিটির জরুরি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লিগ্যাল সেলে আইন উপদেষ্টার পরামর্শ মোতাবেক ভিসি স্যার তার সভাপতিত্বে নেওয়া ২৪ তারিখের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে বাইপাস করে তদন্ত চলাকালীন আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন যা অবশ্যই অন্যায়।
আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাবি শিক্ষক বরখাস্ত
এদিকে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ‘অভিযোগ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের ৫৩৩তম সভার ১৭ নম্বর সিদ্ধান্তে এই কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সাদিকুলের অভিযোগ পাঠানো হলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদেকুল সাগরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলের প্রশাসক আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত অভিযুক্ত অধিকাংশ শিক্ষককেই বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এবং মূল কমিটির তদন্ত চলমান, পরবর্তীতে অভিযোগের সত্যতা মিললেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া বাকি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত হচ্ছে।
এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৩নং সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক সাদেকুল সাগরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া অভিযুক্ত আরও ৯ জন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।