দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনার সময় হাতাহাতির মামলায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, তাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। আর মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে ডিবিতে হস্তান্তর করা হবে।”
গত বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় এ নিয়ে মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হল। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার পাঁচ আইনজীবীকে শনিবার আদালতে হাজির করা হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
ওই পাঁচ আইনজীবী হলেন– আইনজীবী কাজী বশির আহমেদ, তুষার, তরিকুল, এনামুল হক সুমন ও ওসমান চৌধুরী।
নির্বাচন সাব কমিটির কো-অপ্ট সদস্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ শুক্রবার রাতে শাহবাগ থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। সেখানে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
২০ জনের নামে করা ওই মামলার এক নম্বর আসামি সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। আর বিএনপি-জামায়াত সমর্থক প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলকে মামালায় দুই নম্বর আসামি করা হয়।
এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ (৫৫), অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহম্মেদ, ব্যারিস্টার উসমান, অ্যাড. আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল (৪০), অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ।
অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৪০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সেখানে অভিযোগ করা হয়, এক নম্বর আসামির নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তার বাঁ কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন। অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরের জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়।
বাদীর সঙ্গে থাকা ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারধর করেন আসামিরা। লাঠির আঘাতে জাকারিয়ার ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। টানাটানিতে তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে যায়। আসামিরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে যান। তারা অ্যাডভোকেট রিনা বেগমকে চড়-থাপ্পর ও হুমকি দেন। গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। অজ্ঞাত অন্য আসামিরা অডিটোরিয়ামের ভেতরে ভাঙচুর ও অরাজকতা সৃষ্টি করেন। এর ফলে নির্বাচনি দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনি কার্যক্রম ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এজাহারে বলা হয়, নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় বুধ ও বৃহস্পতিবার। ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ আইনজীবী ভোট দেন। কিন্তু ঝামেলা বাধে ভোট গণনা নিয়ে।
আইনজীবীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা শেষ করে ফলাফলের দাবি জানান।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্যরা শুক্রবার বিকালে ভোট গণনার দাবি জানান।
এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষ হট্টগোল এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাইদ একটি পক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর থেকেই থেমে আছে ভোট গণনা ও ফলাফল।
কড়া নিরাপ্তার মধ্যে শনিবার বেলা পৌনে ৩টায় আবার ভোট গণনা শুরু হয় বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানান।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব প্রার্থী হন।
সাতটি সদস্য পদে ভোটে দাঁড়ান সৌমিত্র সরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
আর বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম।
সাতটি সদস্য পদে এই প্যানেলের প্রার্থী হন- ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল।
এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান নির্বাচন করেন।
এছাড়া সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া এবং কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।